পরী মণি আমাদের গৌরব, তিনি ফালতু অভিনেত্রী নন

দুই দফা রিমান্ড শেষে বনানী থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণির জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল আজ শুক্রবার এই আদেশ দেন। এর আগে পরী মণিকে আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। অপরদিকে পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিনের আবেদন করেন।
এরপর দুপুর আড়াইটায় বিচারক আদালতের এজলাসে উঠেন। বিচারক আসন গ্রহণ করার পরে পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান চিত্রনায়িকা পরী মণিকে আদালতের গারদ খানা থেকে এজলাসে নিয়ে আসার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক জানান, শুধু জামিন শুনানির সময় আসামি এজলাসে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। এরপর বিচারক পরি মণির জামিনের শুনানির জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেন।
এরপর পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিন শুনানি শুরু করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনি প্রথমে মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) দেখেন। এখানে বলা আছে, পরী মণির বাসায় মদ পাওয়া গেছে। সেই মদ কারা ডেলিভারি দিত, তাও বলা আছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি বলতে চাই, আমার কাছে জাল টাকা আছে। আমি যদি সেই টাকা কোথাও ব্যবহার না করি বা কাউকে না দেই সেটা অপরাধ হবে না। আমার বাসায় মদ বা এলএসডি মাদক পাওয়া যাওয়ার কথা মামলায় বলা আছে। আমি কি সেই মদ বা এলএসডি নিজে সেবন করতাম? বিক্রি করেছি বা বিক্রি করি? মামলায় এমন কোনো কথা বলা নেই। তাহলে এখানে কোনো অপরাধ গণ্য হবে না।’
পরী মণির আইনজীবী আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি (পরী মণি) কোনো আন্ডারগ্রাউন্ডের সদস্য নই। আমাকে সবাই চিনে। আমি কোনো ফালতু অ্যাক্ট্রেস (অভিনেত্রী) না। আমার আগামী ১৭ আগস্ট থেকে প্রীতিলতা সিনেমার অভিনয় আছে। এটা সরকার অনুমোদন দিয়েছে।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেছেন। তিনি বলেছেন, পরী মণি জামিন পেলে পলাতক হতে পারেন। মাননীয় আদালত, আমাকে (পরী মণি) জামিন দিলে আমি পলাতক হব না। আমার পাসপোর্ট, আইডি কার্ড সব কিছু জিম্মায় রেখে আমাকে জামিন দিন। আমি অসুস্থ রোগী।’
আইনজীবী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, র্যাব যখন আমার (পরী মণি) বাসায় অভিযান করল, তখন র্যাব কারও অনুমতি নেয়নি। নিকটস্থ থানা বনানীতে র্যাব বিষয়টি অবহিত করেনি। র্যাব অভিযানের পরে বলল, পরী মণির বাসায় যে পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে, তা ট্রাক দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম মাত্র ১৯ বোতল মদ। এখানে পরী মণিকে আটকের পরে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হলো। প্রায় ২৪ থেকে ২৫ ঘণ্টা পরী মণিকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে রাখা হলো। এটা অন্য ধরনের ইন্টারেস্ট মনে হচ্ছে। র্যাব সঙ্গে সঙ্গে মাদক উদ্ধারের পরে পরী মণিকে বনানী থানায় সোপর্দ করে মামলা করতে পারত। এটা হ্যারেজমেন্টের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘পরী মণি কোনো খুনের আসামি না। তিনি স্মাগলার না। বাসা থেকে কী পেয়েছে? কয়েকটি খালি বোতল। বিজ্ঞ আদালত জামিন দিবেন। আমি (পরী মণি) সুপরিচিত একজন নায়িকা। আমাকে দেশের সবাই চিনে। আমি পলাতক হয়ে কোথায় যাব?’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু শুনানির জন্য দাঁড়ান। তিনি বলেন, ‘পরী মণি নায়িকা হয়েছেন তো তিনি কী আইনের ঊর্ধ্বে। তাঁর বাসায় মদের বোতল, ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডি ও আইস পাওয়া গেছে। পরী মণি প্রীতিলতা সিনেমায় অভিনয় না করলে ক্ষতি হবে না। এতে সরকারের কিছু হবে না। পরী মণিকে তাঁর শিল্পী সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও বলেন, ‘পরী মণি সুকৌশলে আধাঘণ্টা পর্যন্ত দরজা না খুলে বোতল থেকে মদ ফেলে দিয়ে বোতল খালি করেন। বাসার যে খালি বোতল আছে সেগুলোতে মদ ছিল।’
আবদুল্লাহ আবু আরও বলেন, ‘নায়িকা তো আরও আছে, তাদের বাসায় তো মদ পাওয়া যায়নি। তাদের তো পুলিশ ধরেনি। তাঁকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তাঁর বাসায় মদ ছিল, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পরী মণিকে শিল্পী সমিতি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমি এত গভীরে যেতে চাই না। চিত্রনায়িকা ও সাধারণ মানুষ আইনের চোখে সবাই সমান। তাঁর বাসায় মদ পাওয়া গেছে। আমরা চাই তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।’
এরপর বিচারক পরি মণির জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৪ আগস্ট রাজধানী বনানীর বাসা থেকে চিত্রনায়িকা পরী মণিকে বিপুল মাদকসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তাঁর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। এরপর গত ৫ আগস্ট তাঁকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সেই রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট বনানী থানার মামলায় পরী মণিকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।