ভোটের মাঠে থাকবে অর্ধ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের মাঠে আজ থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিটির ভোটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধ লাখ সদস্য ভোটকেন্দ্র, ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে।
ভোটের আগে-পরে চার দিনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনায় নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়ে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন সদস্য। আর পুলিশসহ আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা থাকবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। গড়ে দুই সিটির দুই হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্যই থাকছেন ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। আর পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল ফোর্সে থাকবে এক হাজার ২৯০ জন, ৪৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে ৪৩০ জন, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে ৫২০ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম হিসেবে দুই সিটিতে র্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি। গড়ে ১১ জন করে এতে মোট এক হাজার ৪৩০ জন র্যাব সদস্য থাকবেন।
ইসি সূত্রে আরো জানা গেছে, দুই সিটিতে র্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, এতে ১১০ জন সদস্য থাকবেন। আর রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। গড়ে ৩০ জন করে মোট দুই হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন। সব মিলিয়ে দুই সিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় অর্ধলাখ সদস্য মাঠে থাকবেন। আর দুই সিটিতে আজ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠে থাকবেন ১৭২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৬৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, মহিলা ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে মহিলা এবং পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য নিয়োগ করা হবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটগ্রহণের দিন এবং এর আগে দুইদিন ও পরে একদিনসহ মোট চারদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। তবে ভোটকেন্দ্রে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি পাঁচ দিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে। ভোটগ্রহণের পূর্বের দিন রাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে ভোটকেন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সব সদস্য ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করবে।
এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোট গ্রহণের দিন এবং তার আগে দুইদিন ও পরে একদিন মোট চারদিন অর্থাৎ আজ ৩০ জানুয়ারি থেকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় চাহিদা, ভোটকেন্দ্রের অবস্থান ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, ওয়ার্ড বিন্যাস ইত্যাদি বিবেচনায় এবং বাস্তবতার নিরিখে রিটার্নিং অফিসার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে ভোটকেন্দ্রের ফোর্স এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ প্লাটুন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সুবিধাজনক স্থানে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রাখা হবে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনে পাঁচটি করে র্যাবের রিজার্ভ টিম নিয়োজিত রাখতে হবে। মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত প্রতিটি টিম, বিশেষ করে বিজিবির টহল দলে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে হবে।
নির্বাচনের রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার আর সন্ত্রাসী, মাস্তানদের আটকে পরিচালনা করছে বিশেষ অভিযান। সিটি নির্বাচনে জনস্বার্থে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিকদের ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুায়ারি পর্যন্ত সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাফেরা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্দেশনায় একথা বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকার উপর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বহুলাংশে নির্ভর করে। এমনকি নির্বাচনে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনায় দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা। এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, দুই সিটি ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিকেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তবে তারা কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বহন করবেন না। কিন্তু ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্ব পালনকালে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটে প্রদান যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবেন।
ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য সবার নিরাপত্তা, ইভিএমের নিরাপত্তা বিধান ও সুশঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসারসহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ক্ষেত্রমতে, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে অবস্থানকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং টহল কাজে নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর কারিগরি সদস্যদের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যেকোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। তাদের কাছে কোনো ধরণের অস্ত্র থাকবে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। ভোটকে সুষ্ঠু করতে তাদেরকে সব ধরনের নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত।’