নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের মধ্যবর্তী চিত্রা নদীর শাখা ‘লাইনের খালের’ ওপর সেতু নেই। প্রাচীন এ খালের বাঁশের সাঁকো দিয়ে ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পাশাপাশি চাঁচুড়ী এবং কৃষ্ণপুর বিলে অবস্থিত কয়েক হাজার মৎস্য ঘের চাষি ও কৃষকসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হয়। মানুষের যাতায়াত, মৎস্য ঘেরে খাবার পৌঁছানো, মাছ এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে মারাত্মক ভোগান্তি পোঁহাতে হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, ‘লাইনের খাল’ পারাপারে কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ২০ বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় এবং তাদের কাছ থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই খাল পারাপার হয় পথচারীরা। এরপর থেকে নষ্ট হলে চাঁদা তুলে নিজ উদ্যোগে সাঁকোটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে আসছে এলাকাবাসী। প্রতিদিন এ পথে উপজেলার কৃষ্ণপুর, ডহর চাঁচুড়ী, চাঁচুড়ীসহ পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। এ ছাড়া এ সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কিষান-কিষানি, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ। জেলার বাইরের দূর-দূরান্তের অনেক চিংড়ি চাষি শত শত একর জমি লিজ নিয়ে চাঁচুড়ী-কৃষ্ণপুর বিলে মাছ এবং বোরো ধানের চাষ করেছে। খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় তাঁদের মাছ ও ধান আনতে দুর্ভোগ হচ্ছে। সাঁকোটির অদূরেই উপজেলার সর্ববৃহৎ চাঁচুড়ী বাজার। সেখানে প্রতিদিন রমরমা বাজারের পাশাপাশি সপ্তাহে রোববার ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। ফলে মৎস্য ঘেরের পাড়ে চাষাবাদকৃত সবজি ও মাছ নিয়ে এসে কৃষকেরা এবং এলাকার বাসিন্দারা সাঁকো পার হতে ভোগান্তির শিকার হয়।

এ ছাড়া কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহণেও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বাজারে আসা মানুষদের। বাঁশের সাঁকো দিয়ে কৃষি পণ্য পরিবহণ সম্ভব না হওয়ায় উভয় পারের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাশের হাট-বাজারে নিতে পারে না। সাঁকোটির পাশেই ডহর চাঁচুড়ী-কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সন্নিকটেই শামসুল উলুম মাদ্রাসা ও সামেলা খাতুন মহিলা মাদ্রাসা অবস্থিত। যে কারণে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে এপার-ওপারে যেতে হয়। অনেক সময় অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।

এ ছাড়া বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে।

বন্যার সময় সাঁকোটি দিয়ে পারাপার খুবই কষ্টকর ও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১২০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটিতে চলার সময় সেটি দোলে, থরথর করে কাঁপতে থাকে। আবার অনেক স্থানে বাশঁ-খুটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ভগ্নপ্রায় বাঁশের সাঁকোটির ওপর দিয়ে অতি কষ্টে ও সাবধানতা অবলম্বন করে পারাপার হচ্ছে মানুষ। অনেকে সাইকেল মাথা নিয়ে একহাত দিয়ে বাঁশ ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পার হচ্ছে সাঁকোটি।

সাঁকোর পুবপারের বাসিন্দা আফজাল আলী মীর বলেন, ‘এই খালের ওপর আমাদের ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না।’

কৃষ্ণপুর ও ডহর চাঁচুড়ী এলাকার আহাদুল ইসলাম, ইমন রহমানসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায় সাঁকো পার হয়ে তাদের স্কুল-কলেজে যেতে হয়। অনেকে প্রায়ই সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁচুড়ী ইউপি সদস্য ছামিউল শেখ বলেন, এখানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিগগিরই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির কালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী প্রণব কান্তি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।