বাংলাদেশের সব সাফল্যের মূল নায়ক আওয়ামী লীগ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সব অর্জন ও সাফল্যের মূল নায়ক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এটি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ থেকে জন্ম নেওয়া দল। বঙ্গবন্ধু তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা ও সীমাহীন আত্মত্যাগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন বলেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগকর্মীদের বিপুল সমর্থনের কারণেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে পেরেছিলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাসসের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই সভায় শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল বিশ্বের একটি মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আগামী তিন বছরে দারিদ্র্যের হার ১৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
অনুষ্ঠানে দলের আইসিটিবিষয়ক সম্পাদক ইয়াফেস ওসমান স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।
বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯০ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনকে উৎখাত করে জনগণের ভোট ও রুটি রুজির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার সরকারকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে।
দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ দিনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল। পাকিস্তানি শাসকরা যখন বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্তে লিপ্ত তখন বঙ্গবন্ধু এ দল গঠন করেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুরু থেকে আওয়ামী লীগ গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই চালিয়ে আসছে। ১৯৫০ সালে এ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে আভির্ভূত হয়। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করে।
শেখ হাসিনা ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মাওলানা ভাসানীর চলে যাওয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, সে সময় দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সময় দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে মন্ত্রিসভার সদস্য থাকার চেয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামকে পেছনে ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু আইনবিষয় নিয়ে পড়তে ইংল্যান্ড যেতে অস্বীকৃতি জানান।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করে দেওয়ার পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্ত সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু পুরোপুরি সচেতন ছিলেন। তাই তিনি দেশে-বিদেশে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপযুক্ত করে আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সে সময় পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি নির্দেশ পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে বঙ্গবন্ধু যখন গ্রেপ্তার হন, তখন তিনি দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে দৃঢ় আস্থাশীল ছিলেন। পাকিস্তানের কারাগারে তিনি যখন বিচারের সম্মুখীন তখনো ভেঙে পড়েননি। বঙ্গবন্ধু তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ ও নিষ্ঠার ব্যাপারে আস্থাশীল ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির জন্য শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা আনেনি, জাতির অর্থনৈতিক মুক্তিও এনেছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত করার লড়াইও সফল হবে।