মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঘাটতি থাকলে চাকরি হারাবেন!

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আবশ্যক শর্ত হিসেবে যুক্ত হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’। চাকরিতে প্রবেশ ও অবস্থানের জন্য রাখতে হবে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ বিষয়ে ‘অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’।
সরকারি কর্মচারী আইনে এ সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত বুধবার এইচ এন আশিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির নবম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এতে আইনটির জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশে কিছু সংশোধনী এনেছে সংসদীয় কমিটি।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য খসড়া আইন ২০১৫-তে আরো বেশ কয়েকটি বিষয় যুক্ত ও বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সংসদীয় কমিটি আইনে একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু ধারাবাহিক সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়া জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ধারণ করিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভ্যুদয়; সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এবং চাকরিতে অবস্থানের আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে উপরিউক্ত বিষয়ে অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস আবশ্যক এবং তদ্বারা সব সরকারি কর্মকাণ্ড ও কার্যাবলি পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন’।
স্থায়ী কমিটির সুপারিশে যারা ‘বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী’ নন বা এ ‘চেতনার ঘাটতি’ রয়েছে, তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কথাও বলা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো কর্মচারীর আচার, আচরণ ও কার্যাবলিতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত সরকারি কর্মচারী বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নহেন অথবা তাহার মধ্যে এই ভিত্তি ও চেতনার ঘাটতি রহিয়াছে অথবা তিনি এই ভিত্তি ও চেতনার বিপক্ষে কাজ করিতেছেন, তাহা হইলে তদন্ত সাপেক্ষে তিনি চাকরি হইতে বরখাস্ত হইবেন এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৩৫ অনুচ্ছেদ ও ইহার ১, ২, ২ (ই) ও ৩ উপ-অনুচ্ছেদের আলোকে ক্ষমতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষ অথবা ক্ষেত্র বিশেষে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।’
পদোন্নতি পেতে পরীক্ষা
সরকারি চাকরিতে, জ্যেষ্ঠতা, পেশাগত দক্ষতা ও কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই সাধারণত পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে এ পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করছে কমিটি। সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট ও অন্যান্য যোগ্যতার সঙ্গে সরকার চাইলে চাকরির কোনো স্তরে নির্ধারিত পরীক্ষা নিয়ে তার ফলাফল বিবেচনা করতে পারবে। একইসঙ্গে কোনো কর্মকর্তার সম্পর্কে সাধারণভাবে প্রচলিত সুনাম বা দুর্নামকে বিবেচনায় আনার কথাও সুপারিশে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া একজন কর্মচারীর কর্ম মূল্যায়নের জন্য আগে বিভিন্ন মানদণ্ড থাকলেও এবার সেখানে যোগ করা হয়েছে জনগণের প্রতি মানবিক হওয়ার বিষয়টি। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মচারী জনসাধারণের প্রতি কতটুকু মানবিক সেটিও তার কর্ম মূল্যায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে।
বছর বছর দিতে হবে সম্পদের হিসাব
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ১৯৭৯ সালের কনডাক্ট রুলসে একটি সংশোধনী দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের পর তাঁর নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়কে নিজের সম্পদের পরিমাণ জানাবেন। এমনকি প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে তাঁর সম্পদের হিসাব জমা দেবেন এবং সম্পদ বাড়ল না কমল সে তথ্যও জানাতে হবে।
এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উন্নত চিকিৎসা ও উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেও সুপারিশে বলা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, আমিনা আহমেদ, খোরশেদ আরা হক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ বলেন, আইনটি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আইনের বেশ কিছু বিষয় আলোচনা হয়েছে। এরপর কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এবং মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করে।