নওগাঁয় ১০ দিন ধরে ধান-চাল কেনা বন্ধ

বোরো ধান-চাল সংগ্রহের ভরা মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে জায়গা না থাকায় নওগাঁ জেলার ১৯টি খাদ্য গুদামে ধান-চাল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় চুক্তি মোতাবেক চাল তৈরি করার পরও গুদামে চাল দিতে পারছেন না মিলমালিক ও কৃষকরা। এতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। লাভের আশায় সরকারি গুদামে চাল দিতে গিয়ে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। আর ভরা সংগ্রহ মৌসুমে চাল কেনা বন্ধ থাকায় সরকারি খাদ্যসশ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নওগাঁ খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে স্থানীয় মিলারদের কাছ থেকে ৬৩ হাজার ৯৪৯ মেট্রিক টন চাল ও ২২ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ছয় হাজার ২২৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে খাদ্য বিভাগ। সেই অনুযায়ী জেলার প্রায় এক হাজার ২০০ চালকলের সাথে চাল সরবরাহের চুক্তিও সম্পন্ন হয়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই গুদামগুলোতে মিল মালিকরা চাল সরবরাহ শুরু করেন। সে সময় গুদাম খালি থাকায় দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ১০-১২ শতাংশ চাল সংগ্রহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু মজুদ বাড়তে থাকা এবং মজুদের তুলনায় চাল অন্যত্র স্থানান্তর না হওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যেই গুদামগুলো জায়গা সংকটের মুখে পড়ে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম বাবু অভিযোগ করে বলেন, চুক্তির পরও খাদ্য বিভাগ ধান-চাল কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় ভীষণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন ধান-চাল সরবরাহকারীরা। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাজার থেকে ধান কিনে এবং সেই ধান থেকে চাল উৎপাদন করে, শ্রমিকের মজুরি ও অতিরিক্ত অন্যান্য ব্যয় বহন করে আবার সেই চাল নিজস্ব গুদামে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না ব্যবসায়ীদের।
গত ২৯ জুন থেকে নোটিশ দিয়ে নওগাঁ সদর, মহাদেবপুরসহ জেলার ১৯টি খাদ্য গুদামে একযোগে চাল কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভের পরিবর্তে লোকসানের দিকে ধাবিত হচ্ছেন বলে জানান তৌফিকুল ইসলাম বাবু।
নওগাঁ সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুন কুমার প্রামাণিক জানান, নওগাঁ সদর খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা সাত হাজার মেট্রিক টন। সদর খাদ্য গুদামে ৩৮৯ মেট্রিক টন ধান কেনা ধার্য থাকলেও চাল কেনার চাপে জায়গার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এখন পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এতে কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে এসেও বিপাকে পড়ছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আমরা ধান নিতে পারছি না। তবে, সদর উপজেলায় প্রায় ৫২ শতাংশ চাল কেনা সম্পন্ন হয়েছে।
নওগাঁ জেলার খাদ্য গুদামে জায়গা সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নওগাঁর ১১ উপজেলায় প্রায় ৩৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার মাত্র ১৯টি সরকারি খাদ্য গুদাম রয়েছে। কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ টার্গেট ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক হওয়ায় জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে।
‘ধান-চাল সংগ্রহ শুরুর পর পরই এখান থেকে অভ্যন্তরীণ সূচির মাধ্যমে অন্য জেলায় শস্য স্থানান্তর প্রয়োজন হয়। এরই মধ্যে বগুড়ার শান্তাহার সিএসডিতে কিছু স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তা সংগ্রহের তুলনায় খুব কম। বর্তমানে গুদামে জায়গা না থাকায় আপাতত ১০ দিন ধরে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ বন্ধ রাখা হয়েছে।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আরো বলেন, ‘তবে, এতে কৃষক বা চাল ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা আরো দুই মাস বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে টার্গেটের ৬০ শতাংশ চাল কেনা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ ধান-চাল সরবরাহের জন্য কৃষক এবং চাল ব্যবসায়ীদের হাতে দুই মাস সময় আছে। ঈদের পর পরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।