সালমান শাহ হত্যার ২১ বছর, এখনো শেষ হয়নি তদন্ত

বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক সালমান শাহের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় এই নায়ক আত্মহত্যা করেছিলেন নাকি তাঁকে খুন করা হয়েছিল—এতগুলো বছরে বহুল আলোচিত এই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি।
সালমান শাহ হত্যা মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। ২১ বছরেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না হওয়ায় বিচারকাজ শুরু করা যায়নি।
এ বিষয়ে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে জানান, সালমান শাহের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার দেশব্যাপী বিপ্লব কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া এ মামলার অন্যতম আসামি রুবির ভিডিওটি নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সালমান শাহের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর সালমান শাহ হত্যা মামলাটিতে প্রাণ ফিরে এসেছে। একজন আসামির কাছ থেকে যে ভিডিও পাওয়া গেছে, তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। সে ভিডিও নিয়ে সঠিক তদন্ত করলে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব হবে।
ফারুক বলেন, ‘আমরা আদালতের নজরে আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবির বক্তব্যসহ ভিডিওটি প্রমাণ হিসেবে দাখিল করব।’
সালমান শাহ হত্যা মামলার আইনজীবী বলেন, ‘ভিডিওটির মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সত্য কখনো চাপা থাকে না। সত্য ঘটনা উদঘাটন হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পাবই।’
গত ৬ আগস্ট সালমান শাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে আসেন।
ওই লাইভে তিনি বলেন, ‘সালমান শাহ ওরফে ইমন আত্মহত্যা করেননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
এতে তিনি নিজে যুক্ত না থাকলেও তাঁর স্বামী চীনা নাগরিক জ্যানলিন চ্যান, ছোট ভাই রুমী, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। এমনকি বিষয়টি জানার কারণে তাঁর নিজের জীবনও এখন হুমকির মুখে বলে সেখানে উল্লেখ করেন রুবি। জানান, তিনি এখন পালিয়ে রয়েছেন।
ওদিন এই ভিডিও প্রকাশের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সালমান শাহর ভক্তরা ভিডিওটি শেয়ার করে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারও দাবি করছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ নিহত হন। সে সময় তাঁর বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন।
১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানের বাবা তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যার অভিযোগটি একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
পরবর্তী সময়ে একই বছরের ৩ নভেম্বর সিআইডি ঘটনাটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করে সিআইডি। একই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত সিআইডি পুলিশের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।
সিআইডির দাখিল করা প্রতিবেদনে সালমানের বাবা সন্তুষ্ট না হয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
ওই রিভিশন মামলার ওপর শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটিকে ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রায় ১২ বছর এ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সিএমএম বিকাশ কুমার সাহার কাছে মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।