বিএনপির জনসভায় এসে যা খাচ্ছেন নেতাকর্মীরা

দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে খোলা ময়দানে জনসভা করার অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেই জনসভা শুরু হয়েছে আজ রোববার দুপুর ২টা থেকে।
জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকে জড়ো হন ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। দুপুর হতেই ক্ষুধায় পেট চো চো করতে থাকে তাঁদের।
এদিকে জনসভায় আসা নেতাকর্মীদের জন্য দলের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেই ভারী কোনো খাবারের ব্যবস্থাও। বাধ্য হয়ে ভাসমান দোকানিদের কাছ থেকে ভেলপুরি, ছোলা, ঝাল পেটিস, পেয়ারা, জাম্বুরা ও আমড়া কিনে খাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মিন্টু নামের যুবদলের এক কর্মী বলেন, ‘ভাই মিছিলে আসছি। খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই ভেলপুরি দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিচ্ছি।’
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রোববার বিএনপির জনসভায় এসে ভেলপুরি দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন নেতাকর্মীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
ভাসমান বিক্রেতা কুতুবউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অন্য খাবার না থাকায় ভেলপুরি ভালোই বিক্রি হচ্ছে।’
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী বাদল বলেন, ‘সমাবেশে আসছি, তাতেই খুশি। খাওয়ার কিছু নাই। তাই ছোলাবুট খেয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিচ্ছি।’
এদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি খুশি বিক্রেতারাও। তাঁদের খুশির কারণ অতিরিক্ত মুনাফা। একসঙ্গে অনেক ক্রেতা পেয়ে খাবারের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পানি বিক্রেতা শফিক বলেন, ‘গরম থাকায় পানি অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। ১৫ টাকার পানি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছি।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভোটের সময় সেনা মোতায়েনসহ বিভিন্ন দাবিতে আজকের জনসভা। দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। জনসভায় প্রধান অতিথি করা হয়েছে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।
গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ বিএনপিকে আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ২২ শর্তে অনুমতি দেয়। এরপরই চলে সভা সফল করতে বিএনপির প্রস্তুতি।
এর আগে আজকের এই জনসভার তারিখ বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করে বিএনপি। প্রথমে ২৭, পরে ২৯, এরপর আজ ৩০ সেপ্টেম্বর জনসভার কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রোববার বিএনপির জনসভায় এসে ভেলপুরি দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন নেতাকর্মীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
জনসভার ঘোষণা দেওয়ার পর দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার আশপাশের নেতাদের সঙ্গে যৌথ সভা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বড় সভা করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা ও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বিএনপির আজকের এই জনসভা। সেই জন্য ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলের নেতাকর্মীদের সভায় অংশ নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড।
আজকের এই জনসভা দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন ঢাকার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাঁরা মৎস্য ভবন, রমনা পার্ক ও শাহবাগ থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। এ সময় গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে আসার ফলে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কদম ফোয়ারা এলাকা হয়ে ওঠে মিছিলের নগরী। এসব মিছিলের মিলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেখানে আজ দীর্ঘদিন পর জনসভা করছে বিএনপি।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রোববার বিএনপির জনসভায় এসে ভেলপুরি দিয়ে দুপুরের খাবার সারেন নেতাকর্মীরা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এসব ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে নানা স্লোগান দেন। তাদের কণ্ঠে ছিল, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দিব না’; ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলনের শক্তি’।
দীর্ঘদিন পর উন্মুক্ত স্থানে জনসভা করার সুযোগ পাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহের কমতি ছিল না। জনসভা সফল করতে আসা প্রতিটি মিছিলের স্রোত গিয়ে মিশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভাস্থলে। যেখান থেকে আজ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। জানাবেন আগামী দিনের আন্দোলনের ফর্মুলাও।
এদিকে জনসভা ঘিরে সব ধরনের নাশকতা ও হট্টগোল ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান।