পৌরসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য সতর্কতা

দেশে দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের পৌরসভা নির্বাচন। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চূড়ান্ত খসড়ায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাতে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তার জন্য প্রক্রিয়াটি সহজ করেছে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, বিধিটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি আগের থেকে আরো সহজ করা হয়েছে। আগে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান ছিল। এটা কষ্টকর হয়। তাই যেসব পৌরসভায় ভোটার ৫০ হাজারের ওপরে, সেসব পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থীদের জন্য ২০০ ভোটারের স্বাক্ষর এবং এর নিচে হলে ১০০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়া বিধান রাখা হচ্ছে। এর সঙ্গে কাউন্সিলরদের জন্য ২০ জন ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জুড়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে এর আগে কেউ যদি সংশ্লিষ্ট পদে নির্বাচিত হয়ে থাকেন, তাহলে তার বেলায় ভোটারদের সমর্থনযুক্ত স্বাক্ষর লাগবে না।
তবে এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সতর্ক করে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার বিষয়টি আগের থেকে সহজ করা হলেও তাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে সমর্থকদের স্বাক্ষর নেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রার্থীকে অবশ্যই তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্য থেকে সমর্থক ঠিক করতে হবে। এটি মেয়র, সংরক্ষিত বা সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সবার জন্য প্রযোজ্য। কারণ যাচাই বাছাই করে যদি দেখা যায় যে তাঁরা যাকে বা যাঁর স্বাক্ষর যুক্ত করেছেন তাঁরা সে সেই ওয়ার্ড বা নির্বাচনী এলাকার ভোটার নয় তাহলে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।’
জাবেদ আলী আরো বলেন, এর আগে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন প্রার্থী এমন একজনকে তাঁর সমর্থক বানিয়েছিলেন যে তাঁর নির্বাচনী এলাকার ভোটার নয়। যাচাই-বাছাইয়ে বিষয়টি ধরা পড়লে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কাজেই এই বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যাতে তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল না হয়।
এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনে থাকা ৪০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য তিন পদে ৩৪টি প্রতীক রাখা হয়েছে।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য জন্য ১২টি প্রতীক হলো ইস্ত্রি, কম্পিউটার, ক্যারাম বোর্ড, চামচ, জগ, টাই, নারিকেল গাছ, বড়শি, মোবাইল ফোন, রেল ইঞ্জিন, হ্যাঙ্গার ও হেলমেট।
স্বতন্ত্র সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জন্য ১০টি প্রতীক হলো আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, চকলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটি ব্যাগ, মৌমাছি ও হারমোনিয়াম।
স্বতন্ত্র সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক হলো উটপাখি, গাজর, টিউব লাইট, টেবিল ল্যাম্প, ডালিম, ঢেঁড়স, পাঞ্জাবি, পানির বোতল, ফাইল কেবিনেট, ব্রিজ, ব্ল্যাক বোর্ড ও স্ক্রু ড্রাইভার।
নির্বাচন কমিশনে পাঠানো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪৫টি পৌরসভায় নির্বাচন করতে চায় ইসি। এসব পৌরসভায় ভোটার রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো তালিকা থেকে দেখা যায়, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ২৩৩টি পৌরসভার মেয়াদ শেষ হবে। এবং সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় ৩০টি পৌরসভা নির্বাচন অনুপযোগী রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১১ সালে ৩১৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৮৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ১২ জানুয়ারি ৭৭টি, ১৩ জানুয়ারি ৪৭টি, ১৭ জানুয়ারি ৪৫টি এবং ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে হয়। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের আগে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসি সূত্রে আরো জানা যায়, আগামী পৌরসভা নির্বাচনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। যেখানে ২০১১ সালের এ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল ৩৬ কোটি টাকা।