সান্তাহারে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত

বগুড়ায় অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৫ জন। আজ শুক্রবার দুপুরে জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত শফিকুল ইসলাম (৪২) সান্তাহার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তিনি ইউনিয়নের সান্দিরা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে। নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর তাঁর লাশ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, শহরের সান্তাহার রেলগেট থেকে বিপি স্কুলের মোড় পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে আজ দুপুরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এতে শফিকুল ও তাঁর ছোট ভাই বাদশাসহ দুই পক্ষের কমপক্ষে ২৬ জন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় শফিকুলকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে ১০ জনকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে, দুজনকে আদমদিঘী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বাদশাকে রাজশাহী মেডিকেলে এবং সোহাগ নামের এক যুবককে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত শ্রমিকরা প্রতিপক্ষের জাতীয় পার্টির কার্যালয়, অটোরিকশা সমিতির কার্যালয়, জাপার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান সুমনের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এতে পুরো সান্তাহার পৌরশহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রেখে এলাকার মানুষ নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে।
সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সদ্য অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে সান্তাহার পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আদমদীঘি উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম রাজা সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তাঁর বড় ভাই নূর ইসলাম সান্তাহার সিএনজি মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি। তাঁর অন্য দুই ভাই শফিকুল ইসলাম ও বাদশা ওই সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছিলেন।
এদিকে আদমদীঘি উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস হাসান সুমন সান্তাহার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেশ কিছুদিন ধরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির লোকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তাঁদের সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। এ নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেশকিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমিতির লোকজন। এর জের ধরে আজ সকাল থেকে জাপা নেতা ফেরদৌস হাসান সুমনের নেতৃত্বে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সমিতি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বেশ কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এতেই এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
বগুড়ার বি-সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. গাজীউর রহমান জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির শহর উপপরিদর্শক (টিএসআই) সানোয়ার হোসেনকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।