চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার, আটক ৮০

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসের পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা নয়টি আগ্নেয়াস্ত্র ও শতাধিক গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় কলেজটির দুটি ছাত্রাবাস থেকে নাশকতার আশঙ্কায় ৭২ জন ও সরকারি মুহসীন কলেজের ছাত্রাবাস থেকে আরো আটজনকে আটক করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি পিস্তল, তিনটি সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, একটি এ কে-২২ রাইফেল, একটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, একটি দুই নলা বন্দুক, পাঁচটি রকেট ফ্লেয়ারসহ শতাধিক গুলি।
পুলিশের দাবি, আটক ব্যক্তিদের সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী। তবে ছাত্রশিবির অস্ত্র ও গোলাবারুদের রাজনীতি করে না দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
সিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মো. আবদুর রউফ জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কলেজের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাসসহ আশপাশে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় দুটি ছাত্রাবাস থেকে ৭২ জনকে আটক করা হয়।
সিএমপির গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে এ এলাকায় বেশ কিছু অস্ত্র জমা করা হয়েছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। তিনি জানান, ড্রেনের পাশে মাটির নিচে এসব অস্ত্র পুঁতে রাখা হয়েছিল। ছাত্রাবাস থেকে আটক ৭২ জন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী বলে দাবি করেন তানভীর আরাফাত। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সরকারি মুহসীন কলেজের ছাত্রাবাসের পেছন দিক দিয়ে পালানোর সময় শিবিরকর্মী সন্দেহে আরো আটজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ কে-২২ রাইফেল ও রকেট ফ্লেয়ার সেনাবাহিনীর হাতে থাকার কথা। এসব অস্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন থাকবে? এর সঙ্গে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, একশ্রেণির শিক্ষক এদের মদদদাতা।’ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা তদন্তে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল জরুরি সভা করে। সভায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জেসমিন আক্তার এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাদের দুটি ছাত্রাবাস থেকে যে ৭২ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই এইচএসসি ও স্নাতক পরীক্ষার্থী। কোনো ধরনের অভিযোগ না থাকলে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক জেসমিন আরো জানান, যেসব অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে, তা ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করা হয়নি। সেগুলো এক স্টাফের বাসার সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ সময় শিক্ষকদের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনারের মন্তব্যের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এ ঘটনার সঙ্গে কোনো শিক্ষক জড়িত থাকতে পারে না।’
ছাত্রশিবিরের নিন্দা : অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা একটি সাজানো নাটক দাবি করে আজ বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা। সে সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি নুরুল আমিন ও নগর দক্ষিণ সভাপতি এম এইচ সোহেল।
বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বেসামাল হয়ে বর্তমান সরকার এ ধরনের আচরণ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সেবাদাস বানিয়ে তারা নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
বিবৃতিতে একটি আদর্শিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির কখনো অস্ত্র, গোলাবারুদের রাজনীতি করে না বলেও দাবি করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। সে সঙ্গে সরকারকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।