নতুন বেঞ্চে খালেদা জিয়ার তিন দুর্নীতি মামলা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য হাইকোর্টের নতুন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এ বেঞ্চ গঠন করেন।
নতুন গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি নূরুজ্জামান ও জাফর আহমেদ। মামলা তিনটিই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা।
এর আগে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে মামলা তিনটির কার্যক্রম চলছিল। এই বেঞ্চে মামলা তিনটি শুনানির জন্য থাকলেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেননি। ফলে তাঁরা মামলাগুলো প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই বেঞ্চের প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনের আস্থা না থাকায় আমরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করিনি। এ ছাড়া হরতাল-অবরোধে আদালতের কার্যক্রম সচল না থাকার ফলে আমরা শুনানিতে অংশ নিইনি।’
গ্যাটকো মামলা
চট্টগ্রাম বন্দর ও কমলাপুরের টার্মিনাল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে মেসার্স গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তাঁর ছোট ছেলের প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা করে দুদক।
মামলায় অনুমোদনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে এ রুল জারি করেন। এ ছাড়া মামলাটি জরুরি ক্ষমতা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৭ সালে আলাদা একটি রিট করা হয়। এ বিষয়ে জারি করা রুলে চূড়ান্ত শুনানির জন্য পৃথক আবেদন করে দুদক।
নাইকো মামলা
কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত এবং রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা
২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা করা হয়। দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করা হয়।
খালেদা জিয়া ছাড়া তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মৃত), তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মৃত), তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী (মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ (মানবতাবিরোধী অপরাধে মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
পরে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পরে কয়েক দফা সময় আবেদন করে মামলার স্থগিতাদেশ বৃদ্ধি করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়া স্থায়ী জামিনে রয়েছেন।