আইভি রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আওয়ামী লীগের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ছোড়া গ্রেনেডে গুরুতর আহত হন আইভি রহমান। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার তৃতীয় দিনে ২৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভৈরবে নেওয়া হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। এর মধ্যে সকাল ৬টায় ভৈরব বাজারে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় খতমে কোরআন। একই সময়ে তাঁর নিজ বাড়ি আইভি ভবনেও অনুষ্ঠিত হয় কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব এ এম বাকী বিল্লাহ জানান, সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভৈরব থানাসংলগ্ন এলাকায় নির্মিত আইভি রহমান তোরণে কালোব্যাজ ধারণ ও আইভি রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
একই স্থানে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। ওই সব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ। প্রধান বক্তা হিসেবে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা করবেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সায়দুল্লাহ মিয়া।
এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন কাজল ও সদস্য সচিব এনামুল হক জাহাঙ্গীর।
১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের চণ্ডীবের গ্রামে জন্ম আইভির। তাঁর বাবা মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। আট বোন, চার ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন পঞ্চম।
ভৈরব কেভি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মো. সায়দুল্লাহ মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই আইভি ছিলেন শান্ত স্বভাবের। গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য তাঁকে বাইরে থেকে খুব কঠোর মনে হলেও আদতে তিনি ছিলেন খুবই দরদি মানুষ। যাঁরা মিশেছেন, কাছে গেছেন তাঁরাই পেয়েছেন অপরিসীম ভালোবাসা, আদর, মমতা আর সহযোগিতা।
আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এর পরই নামের পরে রহমান যুক্ত হয়। এ নামেই তিনি পরিচিতি পান দেশব্যাপী। শুধু আওয়ামী রাজনীতির জন্য নয়, আইভি রহমান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিকভাবেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার খালাশাশুড়ি। একমাত্র ছেলে বর্তমানে ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান পাপন। দুই মেয়ের মধ্যে তানিয়া বখত আইভি রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক। অন্য মেয়ে ময়না গৃহিণী।
আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায় সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেত্রী এবং নীতিনির্ধারক ছিলেন।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন আইভি রহমান। ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
১৯৭৫ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন আইভি। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
রাজনীতি ছাড়াও আইভি রহমান আজীবন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজকে বেঁধে রেখেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এবং সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অবিস্মরণীয়।