সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি ও নারী পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণের সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টা প্রতিবেদন পেয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের যে সব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে।

সুপারিশমালায় বলা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ বিষয়ে কী করণীয়-এতে বলা হয়েছে, ‘শ্রম বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং জীবনমুখী আধুনিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং তাতে নারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় উপবৃত্তি বহাল রাখা ও যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় ফিরিয়ে আনা এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বয়সের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সমন্বিত যৌন শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করা।’

প্রতিবেদনে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্গম এলাকার শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও ঝরেপড়া প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা। সব ধর্ম, জাতিসত্তা ও বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবনধারা ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং তাদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা।’

প্রতিবেদন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতামুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা : জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জনপ্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সব বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ণ ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।

চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩টি নিয়মিত বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের অধিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ৩৯টি পরামর্শ সভা করেছে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও ৯টি সভায় মিলিত হয়েছে।