জরুরি অবস্থাতেও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না : সাইফুল হক

নাগরিকদের আদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য কোনোভাবেই তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
আজ বুধবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন সাইফুল হক।
সাইফুল হক বলেন, জরুরি অবস্থাতেও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না।
সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে মতবিনিময় সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, মাহমুদ হোসেন, রাশিদা বেগম, সাইফুল ইসলাম ও শেখ মোহাম্মদ শিমুল। মতবিনিময় সভায় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুল হক জানান, তাঁরা রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মৌলভিত্তি পরিবর্তন না করতে বলেছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্ন অবান্তর। জুন মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সুরক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, সংবিধান সংস্কারে এটা নিশ্চিত করা দরকার যে, রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের মতাদর্শিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, লিঙ্গীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের জন্য নাগরিকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করবে না। একইসঙ্গে এই সংবিধান নাগরিকদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের এমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যা সাংবিধানিক বা প্রশাসনিক কোনো আইন, বিধি বা অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল, সংকুচিত বা স্থগিত রাখা যাবে না।
সাইফুল হক আরও বলেন, বিদ্যমান সামগ্রিক বিবেচনায় সংবিধান কতখানি গণতান্ত্রিক করা যায়, সংবিধান কীভাবে একটা বহুত্ববাদী সমাজে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারে, সরকারকে কীভাবে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক করা যায় এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের তিন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কীভাবে যৌক্তিক ও ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক নিশ্চিত করা যায়—সংস্কারে এই দিকগুলোই মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত।
সাইফুল হক আরও বলেন, যে ব্যবস্থা একটি দল বা ব্যক্তিকে চরম কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসকে পরিণত করে সেই ব্যবস্থার মূলোৎপাটনের জন্যই সংবিধানসহ রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন।
‘আমরা রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূল নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষেই মতামত দিয়েছি’ উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, সেইসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে সংবিধানের মূলনীতিমালার সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণায় উল্লেখিত- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকেও যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সাইফুল হক জানান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ২৫ রাখার পক্ষেই মত দিয়েছে। একজন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করা এবং সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতার মেয়াদকাল চার বছর করার পক্ষে মত দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিপরিষদের এক নম্বর সদস্য বিবেচনা করে তাঁর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের যৌথ কর্তৃত্বের পক্ষে মত দিয়েছে। সারা দেশে মোট ভোটের সংখ্যানুপাতিক হারে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব দিয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্ন অবান্তর মন্তব্য করে সাইফুল হক জানান, তাঁর দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে বাইরে রেখে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে।
নির্মম বৈষম্য বিলোপে কোনো কমিশন হয়নি দাবি করে সাইফুল হক বলেন, প্রকট বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কারও আখেরে টেকসই হবে না। তাঁর দল সভায় কয়েকটি বিষয় পুনর্বিবেচনার কথা বলেছে। আগামী মে মাসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি কমিশনের সঙ্গে আরও একবার মতিবিনিময় করার কথা জানিয়েছে।