রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ ও সেভ দ্যা চিলড্রেন। ক্যাম্পে মোট ছয় হাজার ৪৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে লেখা ইউনিসেফ এবং সেভ দ্যা চিলড্রেনের এক চিঠিতে এই বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা সেক্টরে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত ছয় হাজার ৪৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতি মাস থেকে বন্ধ হয়ে গেল। এর মধ্যে ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার রয়েছে চার হাজার ৫২৮টি।
ইউনিসেফ কক্সবাজার ফিল্ড অফিসের প্রধান এনজেলা কার্নে ও সেভ দ্যা চিলড্রেন এর মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, উখিয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা সেক্টরের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
এর আগে ইউনিসেফ গত ২ জুন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল, তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুই লাখ ৩০ হাজার শিশু শিক্ষার্থী শিক্ষা ঝুঁকিতে রয়েছে। পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে স্থানীয় শিক্ষক স্বেচ্ছাসেবকদের ছাঁটাই করতে হচ্ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন এই চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউনিসেফ পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক হাজার ২০০ স্থানীয় শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এসব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় থেকে শিক্ষকদের চাকরি পুনর্বহাল এবং পর্যাপ্ত তহবিল প্রদানের জন্য জাতিসংঘকে বলা হয়েছে।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ফান্ডে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে অবরোধ শুরু করে। এর ফলে এই সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দুপুরের দিকে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষকরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করে জানান, উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, কোডেক, ফ্রেন্ডশিপ, মুক্তি কক্সবাজার, জেসিএফসহ শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের বহাল রেখে এক হাজার ২৫০ জন বাংলাদেশি শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যা দাতাসংস্থা ইউনিসেফের ফান্ড সংকট বলে দাবি করা হচ্ছে।
শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো হঠাৎ করে একযোগে এক হাজার ২৫০ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করায় স্থানীয়দের মাঝে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়। অনেকেই এটিকে স্থানীয় উখিয়া-টেকনাফের মানুষের সাথে ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মনে করেন।