ভুয়া মামলা ঠেকাতে নতুন আইন, কার্যকর হচ্ছে সোমবার থেকে

বাংলাদেশে ভুয়া মামলা দায়ের ও বিনা কারণে নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়ানো ঠেকাতে নতুন একটি আইন যুক্ত করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, অ্যাডভাইজার কাউন্সিলের আজকের বৈঠকের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে— ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন। ‘আমাদের সরকারের আমলে কিছু বিষয় নিয়ে আমরা নিজেরাই অস্বস্তিতে ছিলাম। এর মধ্যে একটি হলো— ভুয়া মামলা অন্যটি হলো— মামলায় অকারণে নিরীহ মানুষকে যুক্ত করে ‘মামলা বাণিজ্য’ করা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা ভেবে দেখেছি। বাংলাদেশের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি ধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা আরও জানান, আগে একটি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হতে তিন-চার বছর লেগে যেত, যেখানে শত শত আসামি থাকত এবং কিছু ক্ষেত্রে ‘মামলা বাণিজ্য’ হতো। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১৭৩(ক)/১৭৩(অ) নামে একটি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনার, এসপি বা সমমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি মনে করেন, তাহলে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর মামলার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তার ক্ষমতা ব্যবহার করে যেসব নিরীহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ নেই, তাদের বিচার শুরুর আগেই মামলা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন।
ড. আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করেছেন, এই আইন কার্যকর হলে পুলিশ ও আদালত একসঙ্গে কাজ করে গ্রেপ্তার বাণিজ্য এবং মামলা বাণিজ্য বন্ধ করতে পারবে। এর ফলে নিরীহ ব্যক্তিরা ভুয়া মামলা থেকে রেহাই পাবেন। তবে, তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা চলতে থাকবে।
আইন উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, আগামীকাল সোমবার (৩০ জুন) গেজেট প্রকাশিত হলেই নতুন এই আইনটি কার্যকর হবে।
আইন উপদেষ্টা জানান, আজ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি অগ্রগতি হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনওএইচসিএইচআর-এর প্রধান ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সংস্থাটি বাংলাদেশে তাদের একটি মিশন শাখা খুলতে চেয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনায় বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। আজ উপদেষ্টা কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আরও কিছু আলোচনার পর চূড়ান্ত খসড়াটি ফলকার তুর্কের কাছে পাঠানো হবে। তিনি তার মতামত দিলে দ্রুত এটি সই হবে। এই স্মারক সই হলে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশে এই অফিস স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে যদি কোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমাদের রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এই সংস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত একটি ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে আসিফ নজরুল বলেছেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের যেকোনো সাধারণ নাগরিকের মতোই আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামির পাশাপাশি যারা এই ছবি বা ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও অপরাধমূলক কাজ করেছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা ধর্ষণ বিষয়ক আইনে সময়োপযোগী পরিবর্তন এনেছি, তার প্রমাণ আপনারা মাগুরার ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে দেখেছেন। এই ঘটনাটির ক্ষেত্রেও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার করব, সে বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।’