মহাসড়কে ধানের চারা রোপণ করে অভিনব প্রতিবাদ
ফরিদপুর জেলা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কের বেহাল দশা যাত্রী ও চালকদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য খানাখন্দ এবং গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ বহুগুণ বেড়ে গেলেও সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাবনা এখনও কার্যকর হয়নি। আর গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে গর্তগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় স্থানীয়রা গর্তের ভিতরে ধানের চারা রোপণ করে অভিনব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত যাত্রীরা ও পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা নাজেহাল।
সড়কটি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন জরুরি পরিবহণ চলাচল করলেও দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। গত এক বছরে এই মহাসড়কে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাখুণ্ডা এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার, মহিলা রোড এলাকায় ৩০০ মিটার ও তালমা মোড়ে ১০০ মিটার অংশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে নতুন করে গর্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
পরিবহণ চালক জালাল মাতুব্বর জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যেখানে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখান থেকে ভাঙ্গা গোল চত্বর থেকে ফরিদপুর শহর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার যেতে প্রায় একই সময় লাগছে। সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ফলে যানজটও লেগেই থাকে।
নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর আসতে আগে যেখানে ৩০ মিনিট লাগত। এখন প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ্ সরদার জানান, ভাঙ্গা থেকে নদী গবেষণা পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে এবং কাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বর্ষণের কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছেন না। দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার দুই পাশে পথ প্রশস্ত করে সংস্কার করার জন্য ঠিকাদারকে ৯ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। কাজ দুটি ভাগে ভাগ করে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। একটি অংশ ভাঙ্গা থেকে তালমা পর্যন্ত। আরেকটি তালমা থেকে নদী গবেষণা ও শহর বাইপাস পর্যন্ত।
ফোরলেন প্রকল্পের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা জমি অধিগ্রহণের কাজ করছে, তবে ধীরগতিতে হওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। যদি আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হয়, তাহলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সোহরাব হোসেন জানান, ভূমি অধিগ্রহণ কাজ স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তবে কাজের অগ্রগতির জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।