ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের চিরবিদায়

‘সংশপ্তক’, ‘জাগ্রতবাংলা’, ‘বিজয় কেতন’, ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’ এর মতো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কয়েকটি ভাস্কর্যের স্রষ্টা হামিদুজ্জামান খান আর নেই। আজ রোববার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান।
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানকে গত ১৫ জুলাই এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৯। তিনি ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
হামিদুজ্জামান খান ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত। তার গড়া অধিকাংশ ভাস্কর্যই মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘শান্তির পায়রা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রতবাংলা’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যের পাশাপাশি জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রিলিক, স্কেচ মাধ্যমেও সমানতালে কাজ করেছেন হামিদুজ্জামান খান। মুক্তিযুদ্ধের পর ভাস্কর্যে তার প্রিয় বিষয় ছিল পাখি। রাজধানী ঢাকায় ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখি তার শিল্পী সত্তার সাক্ষ্য বহন করে।
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হামিদুজ্জামানকে আটক করে পাকিস্তানি সেনারা, পরে তিনি ছাড়া পান। যুদ্ধের নৃসংশতা ও মানুষের অকল্পনীয় দুর্দশা তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তার অধিকাংশ ভাস্কর্যের বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ।
হামিদুজ্জামান খান দুইশর মত ভাস্কর্য গড়েছেন। তার একক প্রদর্শনী হয়েছে ৪৭টি। তিনি ২০০৬ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান এবং ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন।