সাংবাদিক তুহিন হত্যা : স্বীকারোক্তিতে যা জানাল আসামি

গাজীপুরে বহুল আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আজ সোমবার (১১ আগস্ট) দুই দিনের রিমান্ড শেষে সাতজনসহ একই ঘটনায় অপর মামলায় অপর একজনকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩-এর বিচারক ওমর হায়দারের আদালতে হাজির করে বাসন থানা পুলিশ।
আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সাংবাদিক তুহিনের লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গতকাল রোববার রাতে হাতে পেয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দুলাল চন্দ্র দাস জানান, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাতজনকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ দুপুরে কড়া পুলিশি প্রহরায় আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে আসামি মো. শাহজালাল ওরফে জালালকে ওই আদালতের বিচারক ওমর হায়দারের কাছে হাজির করা হলে তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এসআই দুলাল চন্দ্র দাস আরও জানান, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ওই সাত আসামিকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তারা তুহিন হত্যা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসআই দুলাল চন্দ্র দাস জানান, একই ঘটনায় বাদশা মিয়া নামের অপর একজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার অপর মামলায় গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলামকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়।
আসামি শাহ জালাল ওরফে জালাল আদালতকে জানায়, সে ইয়াবা ব্যবসা করে এবং ছিনতাই করে। গত ৭ আগস্ট মিজান, স্বাধীন, সুমন, আরমান, ফয়সাল, আল আমিনসহ সে একসাথে ইয়াবা সেবন করছিল। এমন সময় মিজানের স্ত্রী গ্রেপ্তার করা পারুল আক্তার ওরফে গোলাপী ফোন দিয়ে মিজানকে জানায় চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শাপলা ম্যানশনের কাছে একটা লোক পাওয়া গেছে। তার থেকে ফিটিং দিয়ে টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা চাপাতি, দা, সুইচ গিয়ার, চাকু নিয়ে শাপলা ম্যানশনে গিয়ে গোলাপীকে বাদশা নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাতাহাতি করতে দেখে। এ সময় তারা দৌড়িয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। কোপ খেয়ে ওই লোক একটা মুদি দোকানে ঢুকে পড়ে। এ সময় গোলাপী চিৎকার করে বলতে থাকে তুহিন সাংবাদিক ভিডিও করতেছে। গোলাপীর এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই লোককে কোপানো বাদ দিয়ে সাংবাদিক তুহিনকে ধাওয়া করলে সে দৌড়ে পাশের একটি চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে পৌঁছালে তাকে প্রথমে মিজান দা দিয়ে কোপ মারে। কোপ খেয়ে তুহিন দোকানের ভিতরে ঢুকে আশ্রয় নিলে স্বাধীন, সুমন, আরমান, আলামিন, ফয়সাল সবাই এলোপাতাড়ি কোপায়। এ সময় সুযোগ বুঝে সাংবাদিক তুহিনের মোবাইলফোন কেড়ে মিজান ওরফে কেটু মিজান নিজের পকেটে নিয়ে নেয়। এই সময় গোলাপী পুলিশ আসতেছে বলে চিৎকার করলে ঘটনাস্থল থেকে সবাই পালিয়ে যায়।
জিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গতকাল রোববার রাতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ পুলিশের কাছে দিয়েছে। প্রতিবেদনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তুহিনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ময়নাতদন্তে নিহত ব্যক্তির গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপের গুরুতর নয়টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
গত ৭ আগস্ট রাতে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হানিট্র্যাপের ঘটনায় বাদশা মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় কয়েক যুবক। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র মোবাইল ফোন দিয়ে ধারণ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ধারলো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ঈদগাহ মার্কেটের সামনে হত্যা করে মরদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নগরীর বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপরটির বাদী, তুহিন হত্যার আগে সংঘটিত হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তুহিন হত্যা মামলায় মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৪), তার স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপী (২৮), আল আমিন (২১), স্বাধীন (২৮), ফয়সাল হাসান (২৩), শাহ জালাল (৩২) ও সুমন ওরফে সাব্বিরকে (২৬) এবং বাদশা মিয়াকে আহত করার ঘটনায় শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নিহত সাংবাদিক তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মহানগরীর চান্দনা এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন।