বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বাহাউদ্দীন মেওয়া চাষে সফল

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়ায় বসবাসকারী মো. বাহাউদ্দীন (৪৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। এরপর তিনি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। কিন্তু শহরের চাকরি ছেড়ে মাটির টানে ফিরে এলেন গ্রামে এবং শুরু করলেন এমন এক ফলের চাষ, যেটি এখনো উপমহাদেশে ‘অবহেলিত পুষ্টি রত্ন’ হিসেবে পরিচিত- মেওয়া।
বাহাউদ্দীনের ছয় বিঘা জমিতে বর্তমানে এই অম্ল-মধুর ফলটি ফলছে। শখের বশে শুরু হলেও মেওয়া চাষ এখন তার বড় ব্যবসা। চলতি বছরে তিনি এ পর্যন্ত চার লাখ টাকার মেওয়া বিক্রি করেছেন এবং আশা করছেন আরও তিন লাখ টাকার মেওয়া বিক্রি করতে পারবেন।
বাহাউদ্দীন জানান, প্রধান সমস্যা হচ্ছে সংরক্ষণ ও পরিবহন। মেওয়া গাছ থেকে পড়ার দুই দিনের মধ্যে পেকে যায়। হিমঘর বা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কুরিয়ারে বা ট্রাকে পাঠালে ফল নষ্ট হয়ে যায়। মূলত অনলাইন মাধ্যমেই তিনি বিক্রি করছেন। ঢাকাসহ দেশের বড় শহর থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে। মেওয়া চাষে বেশি যত্ন লাগে না। তাই পুরো বিষয়টি লাভজনক।
বাহাউদ্দীনের বাবা দাউদ হোসেন ছিলেন গাংনী উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু বাহাউদ্দীন নিজে পরিচিত হচ্ছেন এক ‘স্মার্ট চাষি’ হিসেবে। প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে তিনি আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, কদবেলসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করছেন। ১৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষও করেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি ‘বাহাউদ্দিন অ্যাগ্রো’ নামে ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তার ফলের প্রচার করছেন। স্থানীয়রা তার উদাহরণ অনুসরণ করছেন।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, বাহাউদ্দীনের দেখাদেখি তিনি দুই বিঘা জমিতে মেওয়া চাষ শুরু করার জন্য জমি প্রস্তুত করেছেন।
বাহাউদ্দীনের সফলতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষি উদ্যোগের নতুন দিকচিহ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি হলে মেওয়া এমন একটি ফল হয়ে উঠতে পারে, যা রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাহাউদ্দীন বলেন, যদি বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে অনেক চাষি মেওয়ার দিকে আগ্রহী হতেন। এত পুষ্টিকর ফল, অথচ নষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে। মাটি আর বিজ্ঞান একসঙ্গে চললে কী হতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ বাহাউদ্দীন। রাজশাহীর পরীক্ষাগার ছেড়ে মেহেরপুরের বাগানে এসে তিনি দেখাচ্ছেন, ভবিষ্যতের কৃষি কেমন হওয়া উচিত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম জানান, বাহাউদ্দীনের দেখাদেখি অনেকেই মেওয়া চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। মেওয়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং পুষ্টিকর একটি ফল। এই ফলটি দেখতে কিছুটা আতা ফলের মতো।