চট্টগ্রামে বন্দর ব্যবহারকারী ও ডিপো মালিকদের দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে আমদানি-রপ্তানি চার্জ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ এবং মার্চ থেকে এক্সপোর্ট স্টাফিং চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন। তবে চার্জ বৃদ্ধির এ ঘটনা নীতিমালা পরিপন্থী বলে জানিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরাম।
আজ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে চার্জ কমানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ফোরামের নেতারা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানির শতভাগ এবং আমদানি করা ২৮টি পণ্যের ৩০ ভাগ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে বেসরকারি ১৭টি কনটেইনার ডিপো। চলতি জানুয়ারি থেকে এসব কনটেইনার ডিপোতে ২০ ফুটের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ১ মার্চ থেকে স্টাফিং চার্জ চার হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ শতভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই চার্জ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী বলে মনে করছেন তাঁরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমদানি-রপ্তানিকারকরা। তার কারণ, আগে প্যাকেজ ছিল একটা কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চার হাজার বা পাঁচ হাজার টাকা। সেটাকে বাড়িয়ে এখন সাড়ে সাত হাজার ও সাড়ে আট হাজার টাকা করা হয়েছে। এটা অনেক টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, একশ পারসেন্ট থেকে দেড়শ পারসেন্টও বৃদ্ধি করেছে।’
আকতার হোসেন আরো বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার আমদানি-রপ্তানিকারকদের ভূমিকা রক্ষা করে এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। এ ব্যাপারেও চেম্বারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা যেত। কিন্তু একপাক্ষিকভাবে বিষয়টি করা হয়েছে।
এদিকে কনটেইনার ডিপোর মালিকরা বলছেন, এ শিল্প টিকিয়ে রাখা ও প্রধান সমুদ্রবন্দর সচল রাখতে বেসরকারি ডিপোর চার্জ বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নুরুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে দুটো ডিপো বন্ধ হয়ে গেছে। পয়সা না পেলে আপনি কতক্ষণ চালাতে পারবেন। আমাদেরকে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত পোর্ট বলা হয়। আমরা যদি খালি না করি, তাহলে কিন্তু চট্টগ্রাম পোর্ট দুদিনেই বন্ধ হয়ে যাবে। বড় বড় ডিপো এক কোটি-দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত লস করে। সুদের হার খুব চড়া। আমরা তো সবাই ব্যাংকের টাকা নিয়েই এসব করেছি।’
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ও পোর্ট ইউজার্স নেতারা বলছেন, অফডেগের নীতিমালার আগে চার্জ বাড়ানোর মতো একক সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবে না।
পোর্ট ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘সবকিছুর একটা নীতিমালা আছে। কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এ জন্য প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাব।’
১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য বেসরকারি ডিপোতে ওঠা-নামার সরকারি সিদ্ধান্তের পর ১৯টি ডিপো গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে নানা কারণে দুটি বন্ধ হয়ে গেছে। কোনোভাবে সচল আছে ১৭টি বেসরকারি ডিপো।