চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর (জুলাই-জুন) শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা, কারফিউ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করেছে। সেখানে বলা হয়, প্রথম তিন প্রান্তিকে বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগে প্রবল ধস দেখা গেছে, যার প্রভাব অর্থবছরে পড়বে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যা ছিল গত ৩০ বছরে সর্বনিম্ন। এতে স্পষ্ট যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবণতা অত্যন্ত দুর্বল। সরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, কারণ মূলধনী ব্যয় হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু স্বস্তির খবর হলো, বৈদেশিক খাতে চাপ কিছুটা কমেছে। এছাড়া চলতি হিসাব ঘাটতি সংকুচিত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, গত এক দশকের একাধিক ধাক্কা দক্ষিণ এশিয়াকে দুর্বল করে দিয়েছে। এখন সময় এসেছে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য টার্গেটেড রিফর্মের।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, নিম্ন রাজস্ব দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ এবং এটি অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশে স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ফাঁকফোকর বন্ধ, কর বিধিমালা সরলীকরণ, কর আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং দূষণমূল্য আরোপ করার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা।

অপরদিক প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নামবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। পাশাপাশি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জন্য এই হার তিন দশমিক ১ শতাংশ। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকে কম। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে এটি আরও কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

ভুটানে কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জলবিদ্যুৎ নির্মাণ খাতে গতি আসায় এটি ৭ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। মালদ্বীপে নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল উদ্বোধনের ফলে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। নেপালে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে এটি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির কারণে ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে ২০২৬ সালে এটি কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।