দেশজুড়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’
ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো। আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করছেন এবং বিভিন্ন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ গতকাল সোমবার এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঘোষণা অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার থেকে দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ শুরু হয়। দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভেতরে বিভিন্ন করিডরে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। তাঁরা সবাইকে বের করে পরে বিভিন্ন ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
ফরিদপুর থেকে এনটিভি অনলাইনের প্রতিবেদক সঞ্জিব দাস জানান, জেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই তাদের ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা অডিটোরিয়ামে একত্রিত হয়ে স্লোগান দেন এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পুরো ক্যাম্পাস অচল হয়ে পড়ে।
ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এই শাটডাউন চালিয়ে যাবেন। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শিহাব উদ্দিন বিপু জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে সকাল থেকে ক্যাম্পাস চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন তারা ক্যাম্পাস। দুপুরের দিকে শিক্ষক ও কর্মচারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
বিক্ষোভের সময় কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মো. জামিল আহম্মেদ সিয়ামসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন, এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। দ্রুত দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ঝিনাইদহ (সদর- কালীগঞ্জ - কোটচাঁদপুর) থেকে মনজুরুল আহসান জানান, ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও অ-কারিগরি ক্রাফটদের পক্ষে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবিতে শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাস বর্জন করেছেন এবং ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্লাসরুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। যদিও সকালে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের জমায়েত দেখা যায়নি, তবে তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে পরবর্তী কোনো বৃহত্তর কর্মসূচি এলে তারা অবশ্যই তাতে অংশ নেবেন। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান এবং অ-কারিগরি শিক্ষকদের তাদের ক্লাস নেওয়ার যোগ্য নন বলে মন্তব্য করেন।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্য আটজন। গত মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এক অফিস আদেশে এই তথ্য জানানো হয়। আদেশে বলা হয়, এ কমিটি তিন সপ্তাহের মধ্যে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন রূপরেখার একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।