ভূমিকম্পে জীবন বাঁচানোর ১০ কথা

ভূমিকম্পের সময় এখনো অনেকেই মনে করেন, রুম থেকে বের হতে না পারলে চেয়ার, টেবিল বা বিছানার নিচে লুকিয়ে থাকাই বুঝি নিরাপদ। আসলেই কি তাই? আজকাল যে হারে বারেবারেই কেঁপে উঠছে আশপাশ, তখন কেবল টোটকা জ্ঞানে ভরসা করা নিরাপদ নয়। ন্যাচারাল নিউজ এবং লাইভসায়েন্স অবলম্বনে জানা গেছে ভূমিকম্পের সময় জীবন বাঁচানোর বিষয়ে দরকারি কিছু জ্ঞান। বিস্তারিত জেনে নিন এখনই।
১। কিছুদিন আগেও ভূমিকম্পের সময় বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি ছিল, যা ‘ডাক অ্যান্ড কভার’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। পৃথিবীর বড় বড় ভূমিকম্পে উদ্ধারকর্মী হিসেবে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা বলছেন- ভূমিকম্পের সময় ‘ডাক অ্যান্ড কভার’ পদ্ধতি যারা অনুসরণ করেছে, তাদের বেশির ভাগকেই তারা নিহত অবস্থায় পেয়েছে। ডাগ কপ নামক একজন অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মী ১৯৮৫ সালে মেক্সিকো সিটির ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। প্রথম যে দালানটিতে তিনি ঢোকেন, সেটি ছিল একটি স্কুল। ভূমিকম্পের সময় স্কুলের বাচ্চাদের বলা হয়েছিল ডেস্কের নিচে আশ্রয় নেওয়ার জন্য। কোনো শিশুকেই ডেস্কের নিচে জীবিতাবস্থায় পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের সময় যেটা হয়- দালান ভেঙে পড়ার সময় সিলিংয়ের সম্পূর্ণ ভার এসব চেয়ার, টেবিল বা খাটের ওপরে পড়ে, তাতে এর নিচে আশ্রয় গ্রহণকারীর বেঁচে থাকার কোনো উপায় থাকে না। তাই ভূমিকম্পের সময় ডেস্ক, টেবিল ইত্যাদি কোনো কিছুর নিচে ঢুকে আশ্রয় নেওয়া ঠিক না।
২। উদ্ধারকর্মীরা আরো লক্ষ করেছেন- দালান ভেঙে পড়ার সময় সিলিং যখন কোনো বস্তুর ওপর পড়ে একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গার সৃষ্টি হয়। একে তাঁরা বলছেন ‘সেফটি জোন’ বা ‘ট্রায়াঙ্গল অব লাভ’। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোনো আসবাব বা বড় কোনো বস্তু যেটা কম চাপ খাবে, এ রকম কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কিন্তু সামান্য এমন ফাঁকা জায়গাই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুন্ডলি করে গুটিসুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন অবজেক্টের পাশে গুটিসুটি করে আশ্রয় নিলে এগুলো ভূমিকম্পের সময় যে ছোট স্থানের সৃষ্টি করবে তাতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৩। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভূমিকম্প হলে কোনো হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নিচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেওয়া এসবও করবেন না। সোজা কোনো সোফা বা ‘ফাঁকা স্থান’ এর সূত্র মেনে কোনো চেয়ার, টেবিল বা বস্তুর পাশে আশ্রয় নিন।
৪। অনেকেই বলেন, ভূমিকম্পের সময় দরজার নিচে আশ্রয় নিলে নাকি বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে! একেবারেই ভুল কথা। দরজার নিচে বা পাশে থাকলে নির্ঘাত মারা পড়বেন। যদি দরজার নিচে থাকেন তবে সিলিংয়ের নিচে চাপা পড়ে মারা পড়বেন আর যদি পাশে থাকেন দরজা আপনাকে দুই ভাগ করে কেটে ভেঙে পড়বে।
৫। ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অব ফ্রিকোয়েন্সি’ দালানের চেয়ে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় দালান ভেঙে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙে পড়ে।
৬। চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভেতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। দালানের ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙে পড়ার পর আপনার ‘এস্কেপ রুট’ বা ‘উদ্ধার পাওয়ার রাস্তা’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে।
৭। ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়িতে থাকেন, তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির পাশে বসে বা শুয়ে পড়ুন। গাড়ির ভেতরে থাকলে রাস্তার ওপরের বিভিন্ন অবজেক্ট গাড়ির ওপর পড়ে গাড়িকে চূর্ণ করার ফলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৮। যাঁরা পত্রিকা অফিসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। উদ্ধারকর্মী যাদের পত্রিকা অফিসে উদ্ধারকাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা বলেছেন- পত্রিকা অফিস বা যেসব অফিসে বড় বড় কাগজের স্তূপ আছে; কাজেই এসব কাগজের স্তূপের কারণে বড় বড় ফাঁকা স্থান বা গহবর বা ‘ভয়েড’ তৈরি হয়। যাঁরা এসব অফিসে কাজ করেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে কাগজের স্তূপের পাশে আশ্রয় নিন।
৯। সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটারশক’ বলা হয়। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেশ পা কাটতে হতে পারে।
১০। প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোনো ধরনের ত্রুটি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।