Skip to main content
NTV Online

মত-দ্বিমত

মত-দ্বিমত
  • অ ফ A
  • প্রতিক্রিয়া
  • সমসাময়িক
  • বহির্বিশ্ব
  • ব্যঙ্গ রঙ্গে
  • ফিরে দেখা
  • স্মরণ
  • বিদেশি কলাম
  • নগর দর্পণ
  • অতিথি কলাম
  • খেলাধুলা
  • পাঠকের কলাম
  • বিবিধ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • মত-দ্বিমত
ছবি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এনটিভিতে উৎসবের আমেজ

জুলাই অভ‍্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি

রোমান্টিক শহরে মেহজাবীন

বিয়ের পিড়িতে জেফ বেজোস - লরেন সানচেজ

জন্মদিনে রুক্মিণী

মি. অ্যান্ড মিসেস মেসি

নিউইয়র্কে পারসা ইভানা

প্রকৃতির কোলে কৌশানী মুখার্জি

মিষ্টি হাসিতে সাবিলা নূর

মায়াবী চোখে কেয়া পায়েল

ভিডিও
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫৪
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৫৪
নাটক : সত্য বলা মহাপাপ
নাটক : সত্য বলা মহাপাপ
প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও : পর্ব ৭
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮২
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮২
এই সময় : পর্ব ৩৮৪০
এই সময় : পর্ব ৩৮৪০
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৯
গানের বাজার, পর্ব ২৩৮
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৯১
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৯১
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, গ্র্যান্ড ফিনালে
টেলিফিল্ম : কে কখন কোথায়
টেলিফিল্ম : কে কখন কোথায়
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১০, ১৯ মে ২০১৭
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১০, ১৯ মে ২০১৭
আপডেট: ০০:১০, ১৯ মে ২০১৭
আরও খবর
সাদাসিধে কথা: আর কতদিন এই ভাঙা রেকর্ড?
সাদাসিধে কথা: স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্ন
সাদাসিধে কথা: বাজাই আমার ভাঙা রেকর্ড
সাদাসিধে কথা: মানুষ মানুষের জন্য
সাদাসিধে কথা: পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?

সাদাসিধে কথা

এই লেখাটি অভিভাবকদের জন্য

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১০, ১৯ মে ২০১৭
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১০, ১৯ মে ২০১৭
আপডেট: ০০:১০, ১৯ মে ২০১৭

আমি আজকের লেখাটি একটি চিঠি দিয়ে শুরু করতে চাই। চিঠিটি পেয়েছি দিন দশেক আগে। চিঠিটি পড়ার পর কী করব, বুঝতে না পেরে ব্যাগে ঢুকিয়ে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছি। মনের ভেতর এক ধরনের চাপা অশান্তি। আমি চিঠিটি হুবহু তুলে দিচ্ছি, কে চিঠিটি লিখেছে, সেটা যেন বোঝা না যায়, তাই দুই একটি শব্দ পাল্টে দিয়েছি। চিঠিটা এ রকম :

‘প্রিয় লেখক,
জানেন আমি কতটা কষ্টের মধ্যে আছি? একটা রাতও আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারছি না। এখন বাজে রাত ২:৩৭ কিন্তু আমার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী, বয়স ১৬ বছর। আগামী ৪ মে আমাদের রেজাল্ট দেবে। আমি জানি যদি আমি এ প্লাস না পাই, তাহলে আমার বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ জন্যই আমি আগে থেকে ঘুমের তেরোটা ট্যাবলেট জোগাড় করে ফেলেছি। আমি একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে, কিন্তু জানেন তারা কখনও জিজ্ঞেস করেননি, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? তাদের ইচ্ছা আমি ডাক্তার হই কিন্তু জানেন আমার সেটাতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আবার মেডিক্যালে ভর্তি হতে হলে নাইন পয়েন্ট দরকার কিন্তু আমি যদি এ প্লাস না পাই এসএসসিতে, তাহলে আমার আব্বু বলেছেন, সব কিছু আমার শেষ হয়ে যাবে। কারণ, ইন্টারমিডিয়েট নাকি অনেক কঠিন।

২০১১ সালে আমি সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু এ প্লাস পাইনি। আমার আম্মু চিৎকার করে মরা কান্নার মতো করে কেঁদেছেন। আমি কিন্তু তখনও বুঝতাম না এ প্লাস কী? এ প্লাস না পাওয়াতে আমার পৃথিবী অন্যরকম হয়ে গেল। সেই ছোট্ট বয়সেই আমি সবার অবহেলার পাত্র হলাম। ফ্যামিলির কেউ আমাকে মূল্যায়ন করত না। জানেন সেই ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ সালের প্রায় প্রত্যেক দিন আমি দরজা লাগিয়ে কেঁদেছি। আমার আব্বু প্রকাশ্যে সব মানুষের কাছে বলত, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না।

কিন্তু আমি আসলে সে রকম না। খেলাধুলা, নাচ, গান-অভিনয়, বক্তৃতা আবৃত্তি সব পারি। আমি গান প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তারা কখনও আমার সুনাম করে না। সব সময় বলে আমি নাকি কিছুই পারি না। সব সময় অন্য সব বান্ধবীর সঙ্গে আমাকে তুলনা করে। আমি ২০১৪ সালে এ প্লাস পাই জেএসসিতে কিন্তু আমাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। আমার ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে, ওকে স্মার্টফোন কিনে দেওয়া হয়েছে।

আপনি কি জানেন এখন আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে? ২০১৪ সালের রেজাল্ট ভাল করার পর সবাই এখন ভালভাবে দেখে কিন্তু আমি জানি, যদি আমি এ প্লাস না পাই এসএসসিতে, তাহলে আমার আবার আগের মতো দশা হবে।

আপনি কি বুঝতে পারছেন না, আমি কতটা কষ্টের মধ্যে আছি? আমি আমার স্বপ্নের কথা যতবার আব্বু আর আম্মুর কাছে বলেছি, ততবার তারা বলেছেন, ওটা আমাকে দিয়ে হবে না, কারণ আমি গাধা।

আচ্ছা, শুধু পড়াশোনা নামক জিনিসটার জন্য ১৬ বছরের একটি কিশোরী কেন এতটা কষ্ট পাচ্ছে, আপনি কি বলতে পারবেন?’

না, আমি বলতে পারব না। শুধু আমি নই, আমার ধারণা ১৬ বছরের এই মেয়েটির প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারবে না। এই চিঠি লেখার পর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয়েছে, আমি জানি না পরীক্ষায় মেয়েটি এ প্লাস পেয়েছে কিনা। নাকি মেয়েটিকে তার জোগাড় করে রাখা তেরোটা ঘুমের ট্যাবলেটের কাছে আশ্রয় নিতে হয়েছে, সেটাও জানি না।

হতে পারে মেয়েটি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ, যেটি লিখেছে, সেটি এই বয়সী ছেলেমেয়েদের তীব্র আবেগের এক ধরনের বহির্প্রকাশ। কিন্তু মুশকিল হলো, এটি কিন্তু আমার কাছে লেখা একমাত্র চিঠি নয়। আমি হুবহু এই ধরনের অসংখ্য চিঠি, ইমেইলে এসএমএস পেয়েছি যার বক্তব্য ঠিক এ রকম। আমার কাছে কোনও পরিসংখ্যান নেই কিন্তু আমি জানি আমাদের দেশে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের অভিভাবক প্রজাতির জন্ম হয়েছে লেখাপড়া নিয়ে তাদের, সম্পূর্ণ ভুল এক ধরনের চিন্তা-ভাবনা। এই দেশের ছেলেমেয়েদের শৈশবকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিচ্ছে। একজন মানুষের কৈশোরটি হচ্ছে স্বপ্ন দেখার বয়স, এই বয়সে যদি একজনকে ঘুমের ট্যাবলেট মজুদ করতে হয়, তাহলে তার জীবনকে আমরা কী নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে শেখাব?

সব অভিভাবক নিশ্চয়ই এ রকম নন, যাদের ওপর ভরসা করতে পারি, সে রকম অভিভাবক নিশ্চয়ই আছেন। একটি ছেলে বা মেয়ের পরীক্ষা খারাপ হলে সান্ত্বনা দেন, তাদের দুঃখ-হতাশা বা স্বপ্ন ভঙের যন্ত্রণাটা ভাগাভাগি করে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করেন এ রকম অভিভাবকও নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে। ছেলেমেয়েদের ভালো মানুষ হতে শেখানো, শত প্রলোভনেও সৎ মানুষ হয়ে থাকার কথা বলা বাবা-মাও নিশ্চয়ই আমাদের ভবিষ্যতের মানুষ গড়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু এই কথাটি এখন নিশ্চয়ই কেউ আর অস্বীকার করবে না আমাদের ভেতরে অভিভাবকের নতুন একটি প্রজন্মের জন্ম হয়েছে, তারা শুধু যে তাদের ছেলেমেয়েদের পীড়ন করে তাদের শৈশবকে বিষাক্ত করে দিচ্ছেন তা নয়; তাদের হাত ধরে অন্যায় করতে শেখাচ্ছেন। পরীক্ষার হলে গেলেই সেগুলো দেখা যায়। একটা সময় ছিল যখন পরীক্ষা শুরুর আগের মুহূর্তে ছেলেমেয়েরা শেষ বারের মতো বই আর ক্লাস নোটের ওপর চোখ বুলাত, এখন শেষ মুহূর্তে তারা তাদের স্মার্টফোনের ওপর চোখ বোলায়, তাদের বাবা মায়েরা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের উৎসাহ দেন। পরীক্ষা শুরুর আগে নিশ্চিতভাবে বহু নির্বাচনি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেমেয়েরা যেটুকু আগ্রহ নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে বাবা-মায়ের আগ্রহ তার থেকে কম নয়। আমরা চোখের সামনে একটা নতুন বিষয় দেখছি, বাবা-মায়েরা প্রকাশ্যে সবার চোখের সামনে নিজের ছেলেমেয়েদের হাতে ধরে অন্যায় করতে শেখাচ্ছেন। পত্র-পত্রিকায় সেই সব ছবি এতবার ছাপা হয়েছে যে, এখন মনে হয় এগুলো সবার গা- সহা হয়ে গেছে।

আমার পরিচিত একজন পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মুখস্থ করে পরীক্ষা দেওয়া একজনকে জিজ্ঞেস করেছিল। এ রকম একটা অন্যায় কাজ করতে তাদের খারাপ লাগে না? ছেলেটি অবাক হয়ে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, খারাপ লাগবে কেন? আপনারা পরীক্ষা দেওয়ার সময় ‘সাজেশন’ নিয়ে পরীক্ষা দেননি? যারা ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দেয় তাদের ভেতর অপরাধবোধ নেই। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁসের গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এগুলোকে ‘সাজেশন’ বলে অনেকবার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এখন এটাই হয়েছে কাল। একজন যখন অন্যায় করে তখন তার ভেতরে অপরাধবোধ থাকলে আমরা তবু আশা করতে পারি, হয়ত কখনও তার ভতরে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু যদি অপরাধবোধ না থাকে তাহলে তো আমাদের সামনে তাকানোর কিছু নেই। আর যখন এই অশুভ অন্যায়ে সন্তানদের হাতেখড়ি হয় তাদের বাবা মায়ের হাত ধরে তখন আমরা কার দিকে মুখ তুলে তাকাব? একজন বাবা-মা যখন তাদের সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন তখন তাদের সন্তানের জন্য কিছু দায়িত্ব থাকে। সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি হচ্ছে যে এই সন্তানকে একটা আনন্দময় শৈশব দিতে হয়। কিভাবে কিভাবে জানি, এই বিষয়টা অনেক বাবা-মা ভুলে গেছেন। তাদের সব হিসাবে গোলমাল হয়ে গেছে, তারা কিভাবে কিভাবে জানি মনে করছেন, তাদের সন্তানদের জন্য একটিমাত্র দায়িত্ব—সেটি হচ্ছে পরীক্ষায় এ প্লাস পাওয়া! সেই এ প্লাসের জন্য তারা শিশুদের পুরো শৈশবকে ধ্বংস করে ফেলতে তাদের কোনও দ্বিধা নেই, কোনও সংকোচ নেই।

একটা সময় ছিল, যখন কোনও একজন বাবা কিংবা মা যখন তার সন্তানকে দেখিয়ে আমাকে বলতেন, ‘স্যার আমার এই ছেলেটি (কিংবা মেয়েটি) গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে!’ আমি তখন আনন্দে আটখানা হয়ে বলতাম, ‘সত্যি? কী চমৎকার! বাহ্! ওয়ান্ডারফুল ফ্যান্টাস্টিক!’ তারপর ছেলেটা বা মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে একেবারে বুকের ভেতর থেকে আশীর্বাদ করে দিতাম। আজকাল আর সেটি হয় না। আজকাল যখন একজন বাবা কিংবা মা আমাকে তার সন্তানকে দেখিয়ে বলেন, ‘স্যার, আমার ছেলেটি বা মেয়েটি গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে’, তখন আমি আনন্দে আটখানা হই না, আমি এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে এই ছেলেটি বা মেয়েটির দিকে তাকাই। আমার চোখের সামনে দিয়ে একের পর আরেক দৃশ্য খেলে যেতে থাকে। আমি জানি এই ছেলে বা মেয়েটির জীবনটি নিশ্চয়ই ভয়ঙ্কর একটি জীবন। এই ছেলেটি বা মেয়েটি শুধু যে স্কুলে গিয়েছে তা নয়, নিশ্চয়ই স্কুলের পর তাকে প্রাইভেট পড়তে হয়েছে, কোচিং সেন্টারে যেতে হয়েছে। এই ছেলে বা মেয়েটির জীবনে নিশ্চয়ই বিনোদনের জন্য একটি মুহূর্তও রাখা হয়নি। তাকে গল্পের বই পড়তে দেওয়া হয়নি, গান শুনতে দেওয়া হয়নি। ছবি আঁকতে দেওয়া হয়নি, তাকে শুধু পড়তে হয়েছে। নিরানন্দ পাঠ্যবই পড়েও শেষ হয়নি তাকে গাইড বই পড়তে হয়েছে। শেখার জন্য পড়ার এক ধরনের আনন্দ আছে কিন্তু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য প্রশ্নের উত্তর হিসেবে মুখস্থ করার মাঝে কোনও আনন্দ নেই। বাংলাদেশের সব সম্ভ্রান্ত পত্রিকা নিয়মিত গাইড বই ছাপায়, বাবা মায়েরা সেই পত্রিকার পৃষ্ঠা কেটে নিশ্চয়ই গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া এই ছেলেটি বা মেয়েটিকে মুখস্থ করতে দিয়েছেন। এই ছেলেটি বা মেয়েটি সেগুলো মাথাগুঁজে মুখস্থ করেছে।

বাবা মা নিশ্চয়ই এই ছেলেটি বা মেয়েটিকে কোনও রকম উৎসাহ দেননি, অনুপ্রেরণা দেননি। নিশ্চয়ই তাকে শুধু চাপের মাঝে রেখেছেন। প্রতি মুহূর্তে অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে তুলনা করে তাকে অপমান করেছেন, অপদস্থ করেছেন। তাকে ভয় দেখিয়েছেন। শুধু বাবা-মা নয়, নিশ্চয়ই স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে পীড়ন করেছে, তার কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ দিয়েছে, প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় পুরো পঁচিশ মার্ক পাইয়ে দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। গোন্ডেন ফাইভ পাওয়া এই ছেলে বা মেয়ের কষ্টের জীবন এখানেই শেষ হয়নি, পরীক্ষার আগে আগে তার বাবা মা নিশ্চয়ই ফেসবুক আঁতিপাতি করে খুঁজেছেন প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা, সেটি দেখার জন্য। ফেসবুক নিশ্চয়ই তাদের হতাশ করেনি। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন নিয়ে তখন তিনি শিক্ষকদের কাছে, ‘মেধাবী’ প্রাইভেট টিউটরদের কাছে ছুটে গেছেন তার সমাধান বের করে দেওয়ার জন্য। সেই সমাধান তুলে দিয়েছেন তাদের সেই ছেলেটি বা মেয়েটির হাতে। তাকে দিয়ে সেটি মুখস্থ করিয়েছেন।

পরীক্ষার দিন তাকে পরীক্ষার হলে নিয়ে গেছেন। সেখানে তারা স্মার্টফোনের দিকে নজর রেখেছেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে যখন এমসিকিউ প্রশ্নগুলো হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবারে চলে এসেছে, তখন সেগুলো সমাধান করে সন্তানের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাকে মুখস্থ করিয়েছেন। পরীক্ষা শেষে যখন ছেলেটি বা মেয়েটি পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েছে তখন তাকে ‘পরীক্ষা কেমন হয়েছে’ জিজ্ঞেস না করে ‘কত নম্বর উত্তর দিয়েছিস’ জিজ্ঞেস করেছেন। পুরো উত্তর না দিয়ে থাকলে তাকে নিষ্ঠুর ভাষায় গালাগাল করেছেন, অপমান করেছেন। পরীক্ষা শেষে ফলের জন্য যখন অপেক্ষা করছে, তখন প্রতি মুহূর্তে সন্তানকে গালাগাল করেছেন, গোল্ডেন এ প্লাস না পেলে যে কী সর্বনাশ হয়ে যাবে, বার বার সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

তারপর পরীক্ষার ফল বের হয়েছে এবং সন্তান গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। কাজেই গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছেলেটি বা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আমি মনে মনে ভাবি, ‘আহা! এই ছেলেটিকে (বা মেয়েটিকে) না জানি কত কষ্ট, কত অপমান, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে!’ শুধু তাই নয়, গোন্ডেন ফাইভ পাওয়া ছেলে বা মেয়েটিকে দেখে আমার অন্য সব ছেলে বা মেয়ের কথা মনে পড়ে যায় যারা গোল্ডেন ফাইভ পায়নি। তারা না জানি কত যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। যখন একটি ছেলে বা মেয়ের আশা ভঙ্গ হয় তখন তাদের বুক আগলে সান্ত্বনা দিতে হয়, সাহস দিতে হয়। কিন্তু আমাদের হয় ঠিক তার উল্টোটা, বাবা মায়েরা ভয়ঙ্কর একটা আক্রোশে তাদের ছেলেমেয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাই প্রতিবছর যখন একটি পাবলিক পরীক্ষার ফল বের হয়, আমি তখন কয়েকদিন নিশ্বাস বন্ধ করে থাকি, খবরের কাগজ খুলতে আমার ভয় হয়, কারণ আমি জানি আমি দেখব যে পরীক্ষার ফল ভালো হয়নি বলে এই দেশের ছেলেরা বা মেয়েরা আত্মহত্যা করেছে। কেন জানি আমার নিজেদের দোষী মনে হয়। আমরা এখনও এই দেশের ছেলেমেয়েদের বোঝাতে পারিনি, জীবনটা অনেক বিশাল একটা ব্যাপার, তার মাঝে একটা পরীক্ষার ফল অনেক ক্ষুদ্র একটা বিষয়!

আমি এই লেখাটি লিখছি অভিভাবকদের জন্য। আমি তাদের বলতে চাই, আপনার সন্তানকে একটি আনন্দময় শৈশব উপহার দিন। আপনি আপনার জীবনে যেটি পাননি সেটি পাওয়ার জন্য আপনার সন্তানকে জোর করবেন না। তাকে তার মতো করে নিজের জীবনের স্বপ্নকে বেছে নিতে দিন। সে হয়ত জীবনের অনেক বাস্তবতা জানে না, তাকে সেই তথ্যটুকু দিতে পারেন কিন্তু তার স্বপ্নের ওপর আপনার ইচ্ছেটুকু জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। পৃথিবীর সব ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ নয়। একটি মাত্র জীবন, সেই জীবনটিতে যদি সুখ আর আনন্দ না থাকে তাহলে সেই জীবন দিয়ে আমি কী করব? স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বাইরে আনন্দ করার জন্য, উপভোগ করার জন্য অনেক সময় থাকতে হয়। তাদের জন্য সেই সময়টুকু বের করে দিন। মাঠে গিয়ে ছোটাছুটি করতে দিন। গল্পের বই পড়তে দিন, গান গাইতে দিন, নাচতে দিন, অভিনয় করতে দিন। যদি কিছু না করে আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখতে চায়, তাকে সেটাই করতে দিন। লেখাপড়ার বাইরে আনন্দ উপভোগ করার জন্য সময় বের করা খুব সহজ। তাকে প্রাইভেট আর কোচিং থেকে মুক্তি দিন। একটা ছেলে বা মেয়ে নিজে নিজে পড়ালেখা করতে পারে, তাকে সেই আত্মবিশ্বাসটি নিয়ে বড় করে তুলুন। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে এই প্রজন্মের আত্মবিশ্বাসী ছেলেমেয়েরা, গোল্ডেন ফাইভ পাওয়া ছেলেমেয়েরা নয়।

আমি এই লেখাটি শুরু করেছিলাম একটি চিঠি দিয়ে। লেখাটি শেষ করতে চাই আর একটা চিঠি দিয়ে। একজন আমাকে লিখেছে :

‘দাদু, 

আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। আমি কখনও প্রাইভেট বা কোচিং করিনি কিন্তু আমি আমার ক্লাসের ফার্স্টগার্ল আর আমার স্কুলের হেড গার্লও। সবাই বলে প্রাইভেট না পড়লে নাকি ভালো রেজাল্ট করা যায় না, কিন্তু আমি একা একা পড়ে যখন ভালো রেজাল্ট করি তখন আমার সব বন্ধুরা একদম অবাক হয়ে যায়, সবাই আমাকে বলে আমি নাকি লুকিয়ে কোচিং করি কিন্তু তাদের বলি না! আমি ওদের কিভাবে বোঝাব যে, নিজে নিজে পড়তে আনন্দটা অনেক বেশি এবং কোনও প্রাইভেটের প্রয়োজন আমাদের নেই। (আমি জানি না তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে কি না। কারণ আমার এ কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না!)’

অবশ্যই আমি এই ছোট মেয়েটির কথা বিশ্বাস করেছি, কারণ আমি নিজেই এই কথা বহুদিন থেকে বলে আসছি। অভিভাবকদের অনুরোধ, আপনারাও এই মেয়েটির কথা বিশ্বাস করুন। প্রাইভেট, কোচিং থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের আনন্দ করার সময় বের করে চমৎকার একটা শৈশব উপহার দিন।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

সাদাসিধে কথা

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. ছেলের ধর্ম ‘ফাঁকা’ রাখলেন ‘টুয়েলভথ ফেল’ অভিনেতা, কারণ...
  2. ফ্লপের ধুলো ঝেড়ে ৭ বছর পর হিট দিলেন আমির
  3. বিবাহবিচ্ছেদের গুজব আর নয়, স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন অভিষেক
  4. বাবু ভাইয়া থাকছেন, জলঘোলা শেষে ‘হেরা ফেরি থ্রি’তে পরেশ রাওয়াল
  5. মা হচ্ছেন সোনাক্ষী? এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী নিজেই
  6. সাধারণ মানুষের জন্য সিনেমা দেখা এখন বিলাসিতা : আমির খান
সর্বাধিক পঠিত

ছেলের ধর্ম ‘ফাঁকা’ রাখলেন ‘টুয়েলভথ ফেল’ অভিনেতা, কারণ...

ফ্লপের ধুলো ঝেড়ে ৭ বছর পর হিট দিলেন আমির

বিবাহবিচ্ছেদের গুজব আর নয়, স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন অভিষেক

বাবু ভাইয়া থাকছেন, জলঘোলা শেষে ‘হেরা ফেরি থ্রি’তে পরেশ রাওয়াল

মা হচ্ছেন সোনাক্ষী? এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী নিজেই

ভিডিও
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৫৮
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৫৮
গানের বাজার, পর্ব ২৩৮
নাটক : সত্য বলা মহাপাপ
নাটক : সত্য বলা মহাপাপ
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০৩
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০৩
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৯১
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৯১
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
পবিত্র হজ্ব ২০২৫ (সরাসরি)
টেলিফিল্ম : কে কখন কোথায়
টেলিফিল্ম : কে কখন কোথায়
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৭০
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৭০
ফাউল জামাই : পর্ব ১০৮
ফাউল জামাই : পর্ব ১০৮
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৯

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x