স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য এনটিভি

দেশের জনপ্রিয় বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ২২ পেরিয়ে ২৩ বছরে পদার্পণ করল আজ।
‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ শ্লোগান নিয়ে ২০০৩ সালের ৩ জুলাই যাত্রা শুরু করে এনটিভি। পরের বছর ১ জানুয়ারি ২০০৪ থেকে ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচার শুরু করে চ্যানেলটি। দেশীয় চ্যানেলগুলোর মধ্যে এনটিভিই সর্বপ্রথম ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আইএসও সনদ অর্জন করে।
অনুষ্ঠানের বিষয় বৈচিত্র, আধুনিক চিন্তাধারা, সুস্থ ও রুচিসম্মত নাটক, টকশো এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এনটিভি দর্শকের মন জয় করে নেয়। আগামীতেও এনটিভি জনপ্রিয়তার এই ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধ পরিকর।
২০০৩ সাল। ঢাকায় তখন দু’টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা ও চ্যানেল আই সম্প্রচারিত হচ্ছে। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার তখন বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাইরে বেসরকারিভাবে এই হচ্ছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের সে সময়কার অবস্থা। তখন বাংলা ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্যে রাজধানীর বনানীর ইকবাল সেন্টারে শুরু হয় আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের স্বপ্নযাত্রার অস্থায়ী কার্যক্রম।
কিছুদিনের মধ্যেই ইকবাল সেন্টারের অস্থায়ী কার্যক্রম শেষ করে কারওয়ান বাজার বিএসইসি ভবনে এর পূর্ণাঙ্গ অফিস চালু করা হয়। স্বপ্ন ক্রমশ বাস্তব হতে শুরু করে এবং এর পরিণতি লাভ করে ২০০৩ সালের ৩ জুলাই সফল সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে। ওইদিন সন্ধ্যায় ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে সগৌরবে সম্প্রচার শুরু করে আজকের দর্শকনন্দিত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এনটিভি। বিশিষ্ট সমাজ সেবক, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদ আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী এনটিভির প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি এনটিভির চেয়ারম্যান।
সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই দর্শকের হৃদয়ে আসন করে নেয় এনটিভি। একদল সৃজনশীল, দক্ষ ও মেধাবী কর্মীর নেতৃত্বে রুচিশীল, অত্যাধুনিক কারিগরি ব্যবস্থাপনায় নতুন নির্মাণশৈলীর উপস্থাপনে অচিরেই দর্শকনন্দিত হয়ে ওঠে এনটিভি। শুরু হয় বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের বৈপ্লবিক অভিযাত্রা।
বর্তমানে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিতে আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলছে এনটিভির কার্যক্রম। নতুন নতুন চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা করে দর্শক রুচিকে প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল হিসেবে এনটিভিই সর্বপ্রথম ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অর্জন করে ISO ৯০০১:২০০৮ সনদ।
উদ্বোধনের দিন থেকেই যুক্ত হয় এনটিভির খবর। রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি, অপরাধ, খেলাধুলা, সামাজিক ইস্যু, মানবিক বিষয়, সংস্কৃতি ও বিনোদন— সকল ক্ষেত্রেই এনটিভির সংবাদকর্মীরা একধাপ এগিয়ে। ঘটনার পেছনের ঘটনা দর্শকদের জানাতে সংবাদকর্মীরা ছুটে যান দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, অভিনবত্ব, বস্তুনিষ্ঠতা এবং ঝকঝকে ও নিপুণ উপস্থাপনায় এনটিভি সবাইকে ছাপিয়ে যেতে থাকে। অগণিত দর্শকের পছন্দের তালিকার শীর্ষে চলে আসে এনটিভির খবর। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য এনটিভির সাংবাদিকরা জিতে নিয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। দেশের মতো এনটিভির সাথে যুক্ত হয়েছেন প্রবাসী দর্শকরাও। প্রবাসেও গড়ে উঠেছে এনটিভি দর্শক ফোরাম। শুধু খবর নয়, এনটিভির বার্তা বিভাগের অসংখ্য অনুষ্ঠান দর্শকদের কাছে পায় জনপ্রিয়তা।
সমসাময়িক প্রসঙ্গের টকশো, অপরাধ বিষয়ক অনুষ্ঠান, বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অতিথিদের মুখোমুখি, ক্রীড়া, গ্ল্যামার ও প্রযুক্তি জগত, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খবর, মায়েদের কথা, উপেক্ষিত প্রবীণদের দুঃখের দিনলিপি, শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদের উঠে আসার কাহিনি এবং আলোকিত মানুষের কথা নিয়ে যাত্রালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত অসংখ্য অনুষ্ঠান এনটিভির পর্দায় আলো ছড়িয়েছে।
এনটিভি ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে সরাসরি প্রাক-বাজেট আলোচনা ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠান এনটিভিকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রার উচ্চতা।
দীর্ঘ ২২ বছরের এতসব অর্জনের পেছনে আছে অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা আর প্রতিযোগিতার পেছনে ছুটে চলা একদল অদম্য কর্মী। যাত্রার শুরুতে প্রথম ছয় মাস আট ঘণ্টার সম্প্রচারে সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা এবং রাতে চারটি খবর প্রচার করে এনটিভি। ১ জানুয়ারি ২০০৪ সাল থেকে ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর বেড়েছে সে সংখ্যা। আর তখন সাড়ে ৭টা, সকাল ১০টা, দুপুর ১২টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৫টা, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা, রাত সাড়ে ১০টা, রাত ১টা এবং রাত সাড়ে তিনটায় নিয়মিত খবর প্রচার করে দর্শকের আস্থা অর্জন করেছে এনটিভি।
যুগ অতিক্রমণের এই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে আসতে এনটিভিকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এনটিভি যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে, যাত্রা শুরুর প্রায় চার বছর পরই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়ে। ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ফলে বন্ধ হয়ে যায় এনটিভির সম্প্রচার। তখন সাময়িক অফিস হয় হোটেল সুন্দরবনে।
এক সপ্তাহের মধ্যে দৃঢ় মনোবল আর প্রত্যয় নিয়ে ২০০৭ সালের ৫ মার্চ সীমিত সময়ের জন্য পরীক্ষামূলক পুনঃসম্প্রচার শুরু হয়। ১২ মার্চ সীমিত সময়ের জন্য বাণিজ্যিক সম্প্রচার শুরু হয়। ১ জুন বিএসইসি ভবনের নিজস্ব কার্যালয় থেকে পুনরায় ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারে ফিরে আসে এনটিভি। কিন্তু ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর আবার অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় এনটিভিকে। ওইদিনই অস্থায়ীভাবে চ্যানেল নাইনের স্টুডিও ব্যবহার করে রাতেই সম্প্রচার শুরু করে এনটিভি এবং গভীর রাতেই নিজস্ব কার্যালয় থেকে আবার শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার। ঘুরে দাড়ানোর সে লড়াইয়ে এনটিভির সঙ্গে ছিল অগণিত দর্শক, শুভাকাঙ্ক্ষী, বিজ্ঞাপনদাতা, ক্যাবল অপারেটরসহ সর্বস্তরের মানুষ।
এত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও এনটিভি তার দর্শকপ্রিয়তা এবং সংবাদ ও অনুষ্ঠানের মান বজায় রেখে আজ ২৩ বছরে পদার্পণের গৌরব অর্জন করছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আর এই সম্ভাবনাকে তুলে আনতে সূচনালগ্ন থেকেই এনটিভি দেশ ও দর্শকের কাছে ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশে ‘রিয়েলিটি শো’র ক্ষেত্রেও এনটিভিই পথপ্রদর্শক।
সঙ্গীতের তরুণ প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমে এনটিভি থেকে সর্বপ্রথম দেশের বৃহত্তম রিয়েলিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ নির্মাণ ও প্রচার করে। বাংলাদেশে প্রথম ‘রিয়েলিটি শো’র ক্ষেত্রে এটা ছিল মাইলফলক এবং এখন পর্যন্ত এটা সর্ববৃহৎ শো হিসেবেই স্বীকৃত। এছাড়া কিশোর-কিশোরী প্রতিভা অন্বেষণ রিয়েলিটি শো, চলচ্চিত্রে নতুন নায়ক-নায়িকা অন্বেষণ কার্যক্রম, কমেডি শো, রান্না বিষয়ক রিয়েলিটি শো এবং ইসলামিক অনুষ্ঠান বিষয়ক রিয়েলিটি শোর মতো অসাধারণ ও জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো প্রচার করে এনটিভি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের নতুন যুগের সূচনা করে। নাটক, সঙ্গীত, শিল্প-সংস্কৃতি, শিশু-কিশোর উপযোগী, শিক্ষা ও ইসলামিক অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারে এনটিভি সর্বদা রুচিশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে।
সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও এনটিভির রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দুর্গত এলাকায় আর্থিক অনুদান দিয়ে সর্বদাই আক্রান্ত মানুষের পাশে থেকেছে এনটিভি। তেমনি শীতার্ত মানুষের পাশে থেকে শীতবস্ত্র আর ত্রাণ বিতরণ করে সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার পূরণে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে।
শিক্ষার প্রসার এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে এনটিভি নিয়েছে নানান কর্মসূচি। এসএসসির কৃতি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে সংবর্ধনা দেয় এনটিভি।
এনটিভির এই নিত্যনতুন আয়োজনে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে এনটিভি অনলাইন। বিশ্বজুড়ে এখন অনলাইন বা ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের জয়জয়কার। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় শামিল হতে এনটিভি ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সাল থেকে চালু করে বিশ্লেষণধর্মী খবর ও বিনোদনের মিশেলে পূর্ণাঙ্গ ইনফোটেইনমেন্ট পোর্টাল www.ntvbd.com.
এনটিভির সম্প্রচারের শুরুর সময় ছিল মাত্র দুটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। আর বিগত ২২ বছরে নতুন নতুন অনেক চ্যানেল চালু হয়েছে। বেড়েছে প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ।
প্রতিযোগিতার এই বাজারে সর্বাধিক দর্শক গ্রহণযোগ্যতা বজায় রেখে গৌরবের সঙ্গে টিকে থাকার জন্য সর্বদাই এনটিভি গ্রহণ করেছে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ। এত সব অর্জনে আছে অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা আর সাধনার পেছনে ছুটে চলা একদল অদম্য কর্মী। রয়েছে এনটিভির বার্তা, অনুষ্ঠান, সেলস এন্ড মার্কেটিং, মানব সম্পদ ও প্রশাসন, ফিন্যান্স, আইটি, ব্রডকাস্ট, গ্রাফিক্স, প্রেজেন্টেশন ও আর্কাইভসহ সকল বিভাগ। সব বিভাগের সকল স্তরের কর্মীর নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার ফলেই আজ এমন গৌরবময় সাফল্য অর্জন করেছে দর্শকনন্দিত স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি।
২৩ বছরে পদার্পণের এই শুভলগ্নে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, ক্যাবল অপারেটর শিল্পী, কলাকুশলী, শুভানুধ্যায়ী ও দর্শকদের সঙ্গে নিয়ে আরেকটি নতুন যুগের প্রত্যাশায় এগিয়ে যাবে সবার প্রিয় চ্যানেল এনটিভি।