আপনার জিজ্ঞাসা
সাদাকাতুল ফিতর কি মসজিদের হুজুর পাবেন?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
আপনার জিজ্ঞাসার ১৮৫১তম পর্বে ই-মেইলে সাদাকাতুল ফিতর কি মসজিদের হুজুর পাবেন এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন সোহাগ । অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের সহিহ পদ্ধতি কী? এটি কি অর্থ দিয়ে আদায় শুদ্ধ হবে? এবং আমি কি নিজে মসজিদে না দিয়ে (অন্য কোথাও) প্রদান করতে পারব? এর প্রকৃত হকদার কে? মসজিদের হুজুর কি তা পাবেন? অথবা মসজিদ বা মাদ্রাসার উন্নয়নে কি সাদাকাতুল ফিতর ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর : সাদাকাতুল ফিতর মসজিদের কোনো হক না। এমনকি মসজিদের ইমামের, মুয়াজ্জেমের, খাদেমের কোনো হক না। মসজিদ নির্মাণের কোনো হক না। এটি শুধু ফকির ও মিসকিনদের হক। এটি আদায় করা ওয়াজিব। যে জ্ঞান আমাদের অর্জন করা ফরজ, তার মধ্যে এটি অন্যতম। অন্যথায় এটি আদায়ই হবে না, কারণ মসজিদের উন্নয়নকাজে বা ইমামকে দিয়ে দিলে আপনার সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয় না।
এ বিষয়ে নবী (সা.)-এর হাদিসে রয়েছে। আবু সাঈদ খুদী (র.) থেকে বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে যে, ‘আমাদের যে খাবার, সেই খাবার থেকে অতিরিক্ত খাবার আমরা বের করতাম।’ এই অতিরিক্ত পরিমাণ হচ্ছে দুই কেজি ৪০ গ্রাম। যেহেতু আমরা বেশির ভাগ মানুষ ভাত খেয়ে থাকি, তাই দুই কেজি ৪০ গ্রাম পরিমাণ চাল দিলেই আপনার সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।
নবী (সা.)-এর সময়ে ছিল ‘আহদুল মুক্কাঈদা’ বা বস্তু বিনিময় প্রথা। যেমন—চালের বিনিময়ে ডাল, খেজুরের বিনিময়ে অন্য জিনিস ইত্যাদি। রাসূল (সা.)-এর সময়ে ছিল দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) এবং দিনারের (স্বর্ণমুদ্রা) প্রচলন এবং এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত পরিসরে। কারণ, এটি খুবই মূল্যবান বস্তু ছিল এবং এর উৎপাদন ছিল খুবই কঠিন। মানুষের কাছে এই মুদ্রা সহজলভ্য ছিল না। ফলে বস্তুর মাধ্যমেই মানুষের লেনদেন হতো। রাসূল (সা.)-এর কোনো বর্ণনায় মূল্য আদায়ের মাধ্যমে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের কথা সাব্যস্ত হয়নি। সাহাবিরা যে এর মূল্য আদায় করছেন, তা কোথাও প্রমাণিত হয়নি। বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য হচ্ছে, আপনি যদি ফকির ও মিসকিনদের কাছে ওই বস্তুটি আদায় করে দেন, তাহলে এটি আদায় হয়ে যাবে। এটি উত্তম এবং সুন্নাহ। যেহেতু রাসূল (সা.) খাবার আদায় করতে বলেছেন, সুতরাং খাবার আদায় করাটাই হচ্ছে সুন্নাহ। কিন্তু কিছু ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, যদি কেউ মূল্য আদায় করে থাকে, তাহলেও তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে, অর্থাৎ টাকা দিয়ে আদায় করা যাবে। এখনকার সময়ে টাকা দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করাকেই সবচেয়ে সহজতর এবং গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মনে করা হয়। কেউ যদি সুন্নাহ অনুসারে চাল দিয়ে আদায় করেন, তাহলেও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যদি বস্তু না দিয়ে টাকায় আদায় করেন, তাহলেও তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যাবে।