ক্রিকেটের যেসব নিয়মে পরিবর্তন আনছে আইসিসি

খেলাকে আরো বেশি গতিশীল করতে মাঝে মাঝেই নিয়মে পরিবর্তন আনে আইসিসি। কদিন আগে ওয়ানডে ক্রিকেটের বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন করে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বেশকিছু নিয়মে পরিবর্তন এনেছে আইসিসি। যা বাস্তবায়ন হবে আগামী ২ জুলাই থেকে। নতুন এই নিয়মে ব্যাটিং ও বোলিং উভয় দলই সুবিধা-অসুবিধা ভোগ করবে।
টেস্টে স্টপ ওয়াচ ক্লক ব্যবহার
প্রতিপক্ষের মনযোগ নষ্ট করতে কিংবা দলের পরিকল্পনা সাজাতে অনেক সময় ক্রিকেটারদের সময় নষ্ট করতে দেখা যায়। ফলে সঠিক সময়ে আর খেলা শেষ করা যায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইম ওয়াচ ক্লক চালু করেছে আইসিসি। যেখানে এক মিনিটের মধ্যে পরবর্তী ওভার শুরু করতে হয় ফিল্ডিং দলকে।
একই নিয়ম চালু করা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটেও। প্রতি ওভারের মাঝে সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ৬০ সেকেন্ড বা এক মিনিট। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ওভার শুরু করতে হবে ফিল্ডিং দলকে। সময় মতো বোলিং শুরু করতে না পারলে ৫ রান জরিমানা গুনতে হবে ফিল্ডিং দলকে। অবশ্য তার আগে দুইবার দেওয়া হবে সতর্ক বার্তা। প্রতি ৮০ ওভার শেষে নতুন করে সতর্ক বার্তার সময় শুরু হবে। নতুন এই নিয়ম চালু হচ্ছে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ (২০২৫-২০২৭) আসর থেকে।
বলে থুতু ব্যবহার এবং বল পরিবর্তনের নতুন নিয়ম
আগে থেকেই বলে লালা বা থুতু ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল আইসিসি। সেই নিয়ম বহাল থাকছে এখনও। বরং সেই নিয়ম আরও কঠিন করা হচ্ছে। এখন যদি বলে লালা ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বল একবারে খেলার অনুপযোগী নাহলে আম্পায়ার বল পরিবর্তন করতে নাও পারেন। বল যদি খেলার উপযোগী না থাকে তাহলে আম্পায়ার বল পরিবর্তন করবেন। কিন্তু ফিল্ডিং দলকে পাঁচ রান জরিমানা করা হবে। যেটা যোগ হবে ব্যাটিং দলের স্কোরে।
রিভিউয়ের নিয়মে পরিবর্তন
আইসিসির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাটারকে ক্যাচ আউট দেওয়া হলে সে যদি রিভিউ নেয় এবং দেখা যায় বল ব্যাটে নয় প্যাডে লেগেছে, তাহলে আর এলবিডব্লিউ চেক করা হয় না এবং ব্যাটারকে নট আউট ঘোষণা করা হয়।
তবে এই নিয়মেও পরিবর্তন আসছে আইসিসি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বল প্যাডে লাগলেও আউট ধরে নিয়ে এলবিডব্লিউয়ের জন্য বল ট্র্যাকিং করা হবে। এরপর বল ট্র্যাকিংয়ে যদি আম্পায়ারর্স কলও আসে তবু ব্যাটারকে আউট বলে ঘোষণা করা হবে।
কম্বাইন্ড রিভিউয়ের নতুন নিয়ম
যদি খেলোয়াড়দের রিভিউ থাকে এবং আম্পায়ার নিজেও রিভিউ নেয় তাহলে যেটা আগে ঘটেছে সেটার রিভিউ আগে হবে। কোনো বলে যদি ফিল্ডিং দল এলবিডব্লিউয়ের জন্য রিভিউ নেয় এবং রান আউটেরও সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আগে এলবিডব্লিউ রিভিউ করা হবে। যদি ব্যাটার এলবিডব্লিউ রিভিউয়ে আউট হয়ে যায়, তাহলে বল তখনই ডেড ঘোষণা করা হবে। আর আউট না হলে তখন রান আউটের জন্য রিভিউ করা হবে আম্পায়ারের পক্ষ থেকে।
নো-বলে ক্যাচের নতুন নিয়ম
আইসিসির বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো বল আম্পায়ার নো-বল হিসেবে ঘোষণা করেন, তাহলে ওই বলে ক্যাচ হলেও সেটা সঠিকভাবে হয়েছে কিনা সেটা যাচাই করা হয় না। নতুন নিয়মে, নো-বল হলেও তৃতীয় আম্পায়ার ফিল্ডার সঠিকভাবে ক্যাচ নিতে পেরেছেন কি না তা দেখবেন। যদি ক্যাচ সঠিকভাবে নিতে পারেন, তাহলে ব্যাটিং দল শুধু নো-বলের জন্য অতিরিক্ত ১ রান পাবে। রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে কোনো রান যোগ হবে না। আর যদি ফিল্ডার সঠিকভাবে ক্যাচ নিতে না পারেন তাহলে ব্যাটাররা রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে যত রান নিবেন সবগুলোই যোগ হবে স্কোরবোর্ডে।
ইচ্ছাকৃত শর্ট রানের নতুন নিয়ম
আগে যদি কোনো ব্যাটার ইচ্ছাকৃতভাবে শর্ট রান নিতো তাহলে ব্যাটিং দলকে পাঁচ রান জরিমানা করা হতো। তবে এবার সেই নিয়ম আরো কঠিন হচ্ছে। যদি এখন কোনো ব্যাটার ইচ্ছাকৃতভাবে শর্ট রান নেন, তাহলে জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে ফিল্ডিং দল ঠিক করবে স্ট্রাইক প্রান্তে কোন ব্যাটার থাকবেন।
ডমেস্টিক ক্রিকেটে ফুল-টাইম প্লেয়ার রিপ্লেসমেন্ট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কনকাশন সাবের মতো নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে ডমেস্টিক ক্রিকেটে। খেলা চলাকালীন যদি কোনো খেলোয়াড় গুরুতর চোট পান এবং সেটি দেখা যায়, তাহলে ম্যাচ রেফারি পুরো ম্যাচের জন্য এক জন ‘লাইক-ফর-লাইক’ প্লেয়ার পরিবর্তন নেওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন। তবে ছোটোখাটো চোট বা মাংসপেশির টান হলে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। আপাতত এই নিয়ম বাধ্যতামূলক নয়। আইসিসির সদস্য দেশগুলো চাইলে ঘরোয়া ক্রিকেটে এই নিয়ম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করতে পারবে।