লুকা মদ্রিচের রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায়ের সমাপ্তি

রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের সফলতম মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ। লস ব্লাঙ্কোদের অনেক জয়-পরাজয়ের সাক্ষী তিনি। রিয়ালের মাঝমাঠের কান্ডারি হয়ে ছিলেন এই ক্রোয়াট তারকা। হারার আগেই হারতে দেননি দলকে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্প্যানিশ জায়ান্টদের স্বপ্নসারথী হয়ে ছিলেন মদ্রিচ। তবে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে দীর্ঘ ১৩ বছরের পথচলার অবসান হলো লুকা মদ্রিচের।
রিয়ালের সাথে তার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। টটেনহাম হটস্পার থেকে স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসেছিলেন ২৬ বছর বয়সে। ৩৯ বছর বয়সে মদ্রিচ যখন মাদ্রিদ ছাড়ছেন তখন তিনি লা লিগার ইতিহাসে রিয়ালের হয়ে খেলা সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় ও গোলস্কোরার।
বিদায়বেলায় ক্রোয়াট তারকা নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আমি কখনোই চাইনি। কিন্তু এটা ফুটবল, এবং জীবনে সব কিছুরই শুরু ও শেষ আছে।’
মদ্রিচ আরও বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ২০১২ সালে এখানে এসেছিলাম দারুণ কিছু করতে, কিন্তু যা পেয়েছি তা কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। একজন খেলোয়াড় ও মানুষ হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ইতিহাসের সেরা ক্লাবটির সবচেয়ে সফল এক যুগের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।’
ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে রিয়ালের হারের মধ্য দিয়েই ক্লাবের সাথে তার যাত্রাটা শেষ হলো। রিয়াল কোচ শাবি আলোনসো বলেন, ‘তার শেষটা কিছুটা তিক্ত ছিল, তবে লুকা মদ্রিচ একজন কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে তার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বলেন, ‘মদ্রিচ সব সময় রিয়াল মাদ্রিদের মূল্যবোধ ধারণ করেছেন। তার খেলা মাদ্রিদিস্তাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।’
২০০৭ সাল থেকে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর যুগে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি অর জিতেন মদ্রিচ। ২০১৮ সালে রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় ও ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলে তিনি জিতে নেন ফুটবল বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত এই পুরস্কার।
রিয়ালের ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে ৫৯৭টি ম্যাচে ৪৩ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন ৯৫টি। ফুটবল ইতিহাসের সফলতম এই ক্লাবটির জার্সিতে ২৮টি শিরোপা জিতেছেন তিনি, যার মধ্যে ৬টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ৪টি লা লিগা, ২টি কোপা দেল রে এবং ৫টি স্প্যানিশ সুপার কাপ শিরোপা রয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের প্রাণভ্রমর ছিলেন এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। তার সময়টায় টনি ক্রুস, কাসেমিরো, ভালভার্দেদের সাথে নিয়ে মাঝমাঠে থেকে খেলাটা খুব সহজেই বের করে আনতেন। খারাপ পরিস্থিতিতে খেলা বের করে আনাটা রিয়ালের সহজাত ব্যাপার। আর সেই কাজটিকে আরও সহজ করে ফেলেছিলেন মদ্রিচ-ক্রুসরা। মাঝমাঠে তাদের হার না মানা মনোবলের কারণেই শেষ বাঁশি বাজার আগে পর্যন্ত যেকোন মূহর্তেই খেলাটা বের করে আনতে পারতো মাদ্রিদ।
ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচের ৬৪তম মিনিট, জুডে বেলিংহামের বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছেন মদ্রিচ। ১০ নম্বর জার্সি গায়ে বাহুতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়ে মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শেষবারের মতো যখন গ্যালাকটিকোসদের হয়ে লড়তে নামলেন তখন দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে সন্মান জানালেন।
মাদ্রিদের হয়ে শেষ মৌসুমে তাকে বেঞ্চেই কাটাতে হয়েছে বেশি। দলের প্রয়োজনে এই মৌসুমে লিগে ৩৪ ম্যাচে ২টি গোলের পাশাপাশি ৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন। তবে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে হেরে একটি শিরোপাশূন্য মৌসুম কাটিয়েই বিদায় নিলেন রিয়ালের এই কিংবদন্তি ফুটবলার। তার বিদায়ে রিয়াল মাদ্রিদের এক অবিস্মরণীয় একটি যুগের সমাপ্তি হলো।
সামনের মৌসুম থেকে তাকে ইতালির ক্লাব এসি মিলানের জার্সিতে দেখা যাবে। ইংলিশ ক্লাব সোয়ানসিয়া সিটির অংশীদারিত্ব ও মালিকানায়ও আছেন তিনি।