অতিপারমাণবিক কণা আবিষ্কার
তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের সন্তান

বিজ্ঞানের দুনিয়ায় গৌরব এনে দিয়েছেন আমাদের জাহিদ হাসান। তিনি বাংলাদেশের সন্তান। তিনি এই দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। কোয়ান্টাম ফিজিক্সে তাক লাগানো আবিষ্কার করেছেন। তাঁর গবেষণাদল আবিষ্কার করেছে অতিপারমাণবিক কণা (Subatomic Particle)। সে কণার নাম ভেইল ফার্মিওন (Weyl fermion)। তত্ত্বীয়ভাবে (Theoretically) সে কণার উপস্থিতির কথা প্রায় আট দশক আগে জানিয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানী ভেইল (Hermann Weyl)। সে কণার অস্তিত্বের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ (Experimental Evidence) মিলেছে জাহিদ হাসানের গবেষণায়। তিনি কাজ করছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভৌত বিজ্ঞানের (Physical Science) জন্য সেটি, পৃথিবীর শীর্ষ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। তাঁর গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জার্নাল, সায়েন্স (Science, AAAS) ম্যাগাজিনে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে ঝড় তুলেছে এই আবিষ্কার।
বিজ্ঞানের জন্য জনপ্রিয় ও উঁচুমানের সব আন্তর্জাতিক সংবাদ পাতায় এসেছে সে খবর। তাঁর আবিষ্কার মানবসভ্যতার কল্যাণে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, সে জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে কুড়ি বছর। তবে ইতিমধ্যেই অনেকেই মনে করছেন- আগামী এক দশকেই এই আবিষ্কার স্বীকৃতি পেতে পারে নোবেল পুরস্কারের। এই কণার (Weyl fermion) সাহায্যে যে নতুন ইলেকট্রনিক্স তৈরি হবে সেগুলোর নাম হবে ভেইলট্রনিক্স(weyltronics)। জাহিদ হাসান নিজেই এই শব্দ উচ্চারণ করে রেখেছেন।
বাংলাদেশ পৃথিবীর মঞ্চে এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য স্পৃহা নিয়ে। তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন বড় হয়েছে। তাদের ভিতর তৈরি হয়েছে এক নেশা। সে নেশার নাম জগৎজয়। তারা হতে চায় ইন্দ্রজিৎ। আমাদের মেধা আছে, আছে প্রত্যয়। এখন শুধু দরকার রাষ্ট্র ও সমাজের নিবিড় পরিচর্যা। মানুষকে স্বপ্নের চূড়ায় পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রকে হতে হয় দায়িত্বশীল। সমাজের পরিচর্যাটা হতে হয় সুষম, সঠিক ও নিবিড়।
এ দেশের বিজ্ঞানের নায়করা ছড়িয়ে আছেন এখন সারা পৃথিবীতে। তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে। সহস্র নবীন-প্রবীণ গবেষক এখন এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায়। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, গণিত, প্রকৌশল-বিজ্ঞানসহ বহু শাখায় নিবিড় গবেষণায় আত্মত্যাগী। ওদের মধ্যে কেউ না কেউ নক্ষত্রের মতো বিকিরণ ছড়াবেন। ওদের কেউ একদিন বিজ্ঞানে নোবেল জয় করবেন। এসব মানুষকে দেখে প্রজন্মের পর প্রজন্মে তৈরি হবে নায়ক।
এ দেশের সন্তান ফজলুর রহমান তৈরি করেছেন (Structural Engineer) পৃথিবীর প্রথম সবোর্চ্চ ভবন (Willis Tower)। আধুনিক শিকাগো শহরের রূপকার ছিলেন ফজলুর রহমান। তাঁর কর্ম এখনো সে শহরে দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। এ দেশের সন্তান আবেদ খান জীববিজ্ঞান গবেষণায় এনেছেন বিশ্বব্যাপী জয়। জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানী। মাকসুদুল আলম পাটের জিনোম সিকোয়েন্স নির্ধারণ করে তাক লাগিয়েছেন। আবুল হুচ্ছাম আবিষ্কার করেছেন সনো ফিল্টার। সে ফিল্টারের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে পানির আর্সেনিক দূষণ দূর করা যায়। শাহ এম ফারুক কাজ করছেন কলেরার ব্যাকটেরিয়া নিয়ে। তাঁর কাজ প্রকাশ হয়েছিল বিজ্ঞানের আরেক জগৎখ্যাত জার্নাল নেচারে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে জাহিদ হাসান আবিষ্কার করেছেন অতিপারমাণবিক কণা (Subatomic Particle)। এমন অনেক নাম উচ্চারণ করা যাবে। এ দেশের অনেক নক্ষত্রই পৃথিবীর নানান প্রান্তে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা আমাদের স্বপ্নকে নাড়া দেন। ওদের কর্মই আমাদের প্রতিজ্ঞাকে আরো মজবুত করে। পৃথিবীর মঞ্চে আমাদের যেতে হবে ঝাঁকে ঝাঁকে। প্রাণের ইচ্ছারা জেগেছে আজ তীব্রভাবে। কবিগুরুর ভাষায়, মাতিয়া যখন উঠেছে পরাণ/ কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ!/ উথলি যখন উঠেছে বাসনা/ জগতে তখন কিসের ডর! প্রত্যয় আর প্রচেষ্টা সাথে থাকুক অটুট। পৃথিবীর বিজ্ঞানে, বাংলাদেশের সন্তানরাই হবে নক্ষত্র! জেগে উঠ এখনই!
লেখক : ডক্টরাল গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেন।