রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দ্বিধায় ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচিত রাশিয়ার উপর দেশটির লাভজনক জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরও গভীর করা। লিথুয়ানিয়া ও আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যায় তা নিয়ে কূটনৈতিক উত্তেজনার শুরুতে এমন প্রস্তাব দেন।
সোমবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে হয়েছে। সেখানে লিথুয়ানিয়া ও আয়ারল্যান্ড রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার জারির প্রস্তাব দেয়।
তবে রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে কিনা— তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে ইউরোপের ২৭ দেশের এ জোটে। জোটের কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিলেও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে জার্মানি-নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো। খবর রয়টার্সের।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোভেনি বৈঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেনের ধ্বংসের পরিধির দিকে তাকালে, রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও কয়লার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার এখনই উপযুক্ত সময়।’
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন করে বলেন, ‘রাশিয়ার জ্বালানি খাত নিয়ে এখন আমাদের আলোচনা করা উচিত। এবং আমরা নিশ্চিতভাবেই তেলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে পারি, কারণ— দেশটির সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে এই খাত থেকেই।’

এদিকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্নালিনা বেয়ারবক দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘ইউক্রেনের সাম্প্রতিক যেসব চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেসব সত্যিই হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো। এমনকি ইইউ এবং বিশ্ব এটাও বিশ্বাস করে, আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা রক্ষার স্বার্থে রাশিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত।’
তবে, রাশিয়ার জ্বালানি সামগ্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে কিছু বলেননি জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে, ইইউয়ের বৈঠকে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু না বললেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি সরাসরি খারিজ করে দেন। বৈঠকে মার্ক রুট বলেন, ‘ইইউ এখনও রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল এবং এমন কোনো বিকল্প এখন আমাদের সামনে উপস্থিত নেই যে আমরা আগামী কালই রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ করে দিতে পারব।’
উল্লেখ, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার একের পর এক অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপ। দেশটির প্রধান ব্যাংকগুলোকে ইউরোপের দেশগুলো থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে রাশিয়াকে। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জমা থাকা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদও ফ্রিজ করা হয়েছে।