শুধু তিনিই বন্ধ করতে পারেন মিয়ানমারের গণহত্যা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চলাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় দেশটির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির প্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী নেতা অং সান সু চির অবস্থানেরও নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এমনকি অং সান সু চি নিজেও রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা অস্বীকার করতে পারেন না। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না কী কারণে সু চি এই সহিংসতা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, কারণ মিয়ানমারের ২৫ আগস্ট পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পে হামলার জন্য দায়ী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই ‘নির্মূল অভিযান’ চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াংয়ের বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হামলা-নির্যাতন আর ধর্ষণের মাধ্যমে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগও রয়েছে।
এর ফলে গোটা সীমান্ত এলাকাতেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তার শিকার হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছে, সেনাবাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করছে এবং গোটা গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পাঁচ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা হত্যা করা হয়েছে।
মিয়ানমারে নিরাপত্তার নামে চালানো অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের লক্ষ্য বানানো হয়েছে। দেশটির এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের’ একটি টেক্সট বুক উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জাইদ রাদ আল হুসাইন।
মিয়ানমারের ‘সেনাবাহিনী রচিত সংবিধানে’ দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর অং সান সু চির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনী দেশটিতে স্বাধীন। এ ছাড়া দেশটির পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী, কারাগার ও সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে।
শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনে রয়েছে সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে এই পরিষদের। অনেক শীর্ষস্থানীয় পদের দখল করে আছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। এসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ব্যবসায়িক স্বার্থও জড়িত রয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার দেশটির করদাতাদের অর্থে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়। এ বছরের শুরুর দিকে জার্মান ও অস্ট্রিয়ার সরকার মিন অং হ্লাইংকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আলোচনা করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
এ সময় তিনি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী কারখানাগুলোতেও পরিদর্শন করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সামরিক বাহিনী প্রধানদের মর্যাদাবান এক বার্ষিক সম্মেলনেও তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়।
এ ছাড়া চলতি বছরে মিন অং হ্লাইং ভারত ও জাপান সফর করেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন শুরু করার পরও সামরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর প্রধান। মূলত এসব কারণেই দেশটির সেনাবাহিনী অনেক শক্তিশালী।
বিশ্বে সামরিক শক্তিতে মিয়ানমারের অবস্থান ৩১। দেশটির সেনাসংখ্যা পাঁচ লাখ ১৬ হাজার। বিমানবাহিনীতে বিমানের সংখ্যা ২৪৯টি। মিয়ানমারের দখলে ট্যাংক রয়েছে ৫৯২টি। রয়েছে এক হাজার ৩৫৮টি বিভিন্ন ধরনের সাঁজোয়া যান, ৯৯৬টি কামান ও ১০৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যান। নৌবাহিনীতে রয়েছে পাঁচটি ফ্রিগেটসহ ১৫৫টি তরী।