ফ্রান্সে নিহতদের এক তৃতীয়াংশই মুসলমান

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শহর নিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের এক তৃতীয়াংশই মুসলমান। ফ্রান্সের রিজিওনাল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
ইউরোপে মুসলিমদের অন্যতম বড় এই সংগঠনটির প্রধান জানান, নিসে ট্রাক হামলায় নিহত ৮৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩০ জনই মুসলমান। নিসে নিহতদের পরিচয় নিয়ে ফ্রান্সের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের বরাত দেন তিনি।
গত ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে ফ্রান্সের নগরী নিসে বাস্তিল দিবসের সমাবেশে দ্রুতগতিতে ট্রাক চালিয়ে দিয়েছিল তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক মোহাম্মাদ লাহাউয়েজ বুলেল। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় বুলেল।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন তিউনিসিয়ার নাগরিক। নিসের ইমাম এবং ইউনিয়ন অব মুসলিম অব আল্পস-মেরিটাইমের সভাপতি ওসমান আইসসাওই ওই ঘটনায় তিউনিসিয়দের নিহত হওয়ার সংখ্যাটি নিশ্চিত করেন। একই সংগঠনের মুখপাত্র কাওসার বেন সালেম জানান, নিহত ৩০ মুসলিমের জানাজা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষরা রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন ফাতিমা শারিহি। ৬২ বছরের মরক্কোর এ মহিলা সাত সন্তানের মা। তিনি নিসের রাহমা মসজিদে প্রায়ই নামাজ পড়তে যেতেন। একই মসজিদে ইমামতি করেন ওসমান। তিনি জানান, হামলার ঘটনায় নিহত হয়েছে ১২ বছরের মুসলমান শিশু মেহেদি এবং তার যমজ বোন সারা এখনোকোমায় রয়েছে।
ইমাম ওসমান বলেন, ধর্ম বিশ্বাস যাই হোক, নিহতরা সবাই ফ্রান্সে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছেন এবং একই সঙ্গে তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন। এখানে ধর্ম নিয়ে বিভেদের সুযোগ নেই।
ইউনিয়ন অব মুসলিম অব আল্পস-মেরিটাইমের সভাপতি বলেন, সন্ত্রাসীদের একমাত্র পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। এই দুঃসময়ে যাতে এ নিয়ে খ্রীস্টান-মুসলিম বিভেদ না সৃষ্টি হয় সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইরানের একজন সাংবাদিকের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছিল গার্ডিয়ান অনলাইন। মরিয়ম ভাইওতি নামে ইরানের ওই নারী সাংবাদিক জানান, ট্রাক চাপা পড়া মৃতদেহগুলো তিনি দেখেছেন। মৃতদেহগুলোর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন নারী। এবং এঁদের মধ্যে অন্তত দুজন হিজাব পরিহিত ছিলেন।
এই নারী সাংবাদিকের বক্তব্যের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তিউনিশিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি হত্যাকারী বাছবিচারহীনভাবে বাস্তিল দিবসে নিসে আতশবাজির উৎসব দেখতে জমায়েত জনতাকে পিষে খুন করেছে।
ইরানের ‘জানান’ টিভিতে কাজ করা ওই নারী সাংবাদিক জানান, ‘হত্যাকাণ্ডস্থলে অনেক মুসলিম ছিলেন। লাশগুলো যখন রাস্তায় পড়েছিল তখন আমি ওইখানে যাই।
সেখানে আমি অনেককেই আরবিতে আহাজারি করতে শুনেছি। এক আরব পরিবার ছিল ওখানে- তাঁদের মা হামলায় নিহত হয়েছিলেন। ওই পরিবারটি চিৎকার করে কাঁদছিল এবং তাদের মাকে শহীদ বলে বর্ণনা দিচ্ছিল।
মরিয়ম ভাইওতি আরো জানান, বাস্তিল দুর্গ পতন দিবস উপলক্ষে চারপাশে তখন ছিল উৎসবমুখর, আনন্দের হিল্লোল বইছিল। আতশবাজি পোড়ানোর সময়ও মানুষের উল্লাসধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পরই ভয়াবহ এই হামলা হয়।
নিস শহরে ওই হামলায় আতশবাজি দর্শনরত জনতার ওপর দ্রুতগতির ট্রাক তুলে দিয়ে ৮৪ জনকে হত্যা করে ওই তিউনিসীয় হামলাকারী। এ হামলায় আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক।
এর আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী শহর প্যারিসে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বন্দুকধারী ও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের হাতে ১৩০ জন নিহত হন। এর আট মাসের মধ্যে নিসে হামলার ঘটনা ঘটে।