বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দৌড় প্রতিযোগিতা

প্রায় ২০০ গজের খাড়া ঘাসের পাহাড়ের ওপর থেকে একটি ডাবল গ্লুচেস্টার পনিরের চাকা গড়িয়ে দেওয়া হয় আর প্রতিযোগীরা সেটিকে তাড়া করে নিচে নামার চেষ্টা করেন। লক্ষ্য একটাই, অন্য সবার আগে শেষ রেখা পার হওয়া। তবে প্রায় খাড়া পাহাড়ে এটি খুবই কঠিন এক কাজ।
প্রতি বছর ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্রকওয়ার্থ গ্রামের কুপার্স হিলে অনুষ্ঠিত হয় এই অদ্ভুত ও বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা। এর নাম ‘পনির দৌড়’। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে হাস্যকর দৌড়গুলোর একটি।
এই প্রতিযোগিতায় ক্রিস অ্যান্ডারসন ২০০৫ সালে তার প্রথম দৌড় জেতেন এবং পরবর্তীতে রেকর্ড ২৩টি জয় নিয়ে এই প্রতিযোগিতার কিংবদন্তির তালিকায় নাম লেখান।
সিএনএন স্পোর্টসকে তিনি প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলেন, ‘নিজের সুরক্ষার প্রতি আপনার উদাসীন থাকতে হবে।’ তিনি একবার দৌড়াতে গিয়ে গোড়ালি ভেঙেছিলেন এবং আরেকবার অজ্ঞান হয়ে শেষ রেখা অতিক্রম করেছিলেন। কিন্তু এই আঘাতগুলো তাকে দমাতে পারেনি।

ঐতিহ্যের গভীরে এক অদ্ভুত প্রথা
কুপার্স হিলের নিচে এই পনির তাড়া করার ঐতিহ্য কতদিন ধরে চলে আসছে, তা নিশ্চিতভাবে কেউ জানে না। তবে ১৮২৬ সালে এর প্রথম লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এটি হয়তো কৃষকদের ফসলকে আশীর্বাদ করার জন্য একটি প্রাচীন পৌত্তলিক প্রথা হিসেবে শুরু হয়েছিল। এই ঐতিহ্য স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত গর্বের এবং ইন্টারনেটের যুগে এটি এখন একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর মে মাসের শেষ ব্যাংক ছুটিতে হাজার হাজার মানুষ এই ইভেন্টে ভিড় করে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দূরদূরান্ত থেকেও বিজয়ীরা আসেন। তবে মজার বিষয় হলো, চূড়ান্ত চ্যাম্পিয়নরা প্রায়শই স্থানীয়রাই হন, কারণ তারাই পাহাড়ের প্রতিটি বাঁক ও ঢাল সবচেয়ে ভালোভাবে চেনেন।

পাহাড়ের চ্যালেঞ্জ এবং অনিবার্য আঘাত
এই পাহাড়টি অস্বাভাবিক খাড়া, যার প্রাথমিক পতন প্রায় ৬০ ডিগ্রি এবং গড় ঢাল ৪৫ ডিগ্রি। ওপর থেকে তাকালে এটি প্রায় একটি খাদের মতো মনে হয়। অ্যান্ডারসন ব্যাখ্যা করেছেন, ‘প্রথম ১০ মিটার প্রায় উল্লম্ব। আপনাকে প্রায় ডুব দিতে হবে এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। একবার গতি পেলে থামার কোনো উপায় থাকে না, তখন কেবল গতি সামলে নিচে নামার চেষ্টা করতে হয়।’
এই দৌড়ের ভিডিও ফুটেজে চরম বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখা যায়। খুব কম প্রতিযোগীই বেশিক্ষণ সোজা থাকতে পারেন। অনেকেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় পড়ে যায়। পড়ে গেলে গুরুতর আঘাত প্রায় নিশ্চিত। এক বছর অ্যান্ডারসনের তিনটি গোড়ালি ভেঙেছিল। গোড়ালির আঘাত এবং মাথায় আঘাত (কনকাশন) খুবই সাধারণ। ২০২৩ সালের মহিলা চ্যাম্পিয়ন ডেলানি ইরভিং ফিনিশ লাইনের ঠিক আগে ছিটকে পড়েছিলেন এবং পরে তাকে যখন মেডিকেল এনক্লোজারে আনা হয়, তখনই তিনি তার জয়ের কথা জানতে পারেন।

ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নেটফ্লিক্সের ডকুসারি ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়নস’-এ মহিলা রেকর্ডধারী ফ্লো আর্লি তার ডান কাঁধের একটি অংশের স্থায়ী বিকৃতির কথা বলেছেন, যা পাহাড়ে কলার হাড় ভাঙার কারণে হয়েছিল। তাই অনেক দৌড়বিদকে দৌড়ানোর আগে কিছুটা অ্যালকোহল পান করতে দেখা যায়। যদিও পাহাড়জুড়ে সাইনবোর্ডগুলি স্পষ্ট করে যে, দৌড়বিদরা নিজ ঝুঁকিতে অংশগ্রহণ করছেন এবং ইভেন্টটি বীমামুক্ত, তবুও উৎসাহীরা এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

৩৭ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি নিতম্বের আঘাত থেকে সেরে উঠছেন এবং তিনি ‘অবসর নেওয়ার কথা’ ভাবছেন। তবে তার ১৬ বছর বয়সী ছেলে যদি প্রতিযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাকে আবারও পাহাড়ে নামার জন্য প্রলুব্ধ করা হতে পারে। অ্যান্ডারসন চান তার ছেলে যেন এই দৌড়টি সঠিকভাবে করে।