এনডিটিভির প্রতিবেদন
লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর পরিকল্পনায় পাল্টা পদক্ষেপ ভারতের

লালমনিরহাটে পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় চালুর পরিকল্পনার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরে একটি তিন দশক পুরোনো বেসামরিক বিমানবন্দর চালুর কাজ শুরু করেছে ভারত। দেশটির আশঙ্কা লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়ায় চীনের সহযোগিতা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) এমনই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের লালমনিরহাটে অবস্থিত এই বিমানবন্দরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার। এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে এবং এটি ভারতের ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোর থেকেও মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। তবে বাস্তবে চিকেন নেক থেকে এই দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন যদি লালমনিরহাট বিমানবন্দর সংস্কারে বিনিয়োগ করে, তাহলে সেখানে চীনা সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধবিমান, রাডার, নজরদারি সরঞ্জাম ইত্যাদি মোতায়েন হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আর এটাই ভারতের জন্য গুরুতর নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণ।
এই পটভূমিতে ভারত উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরে একটি তিন দশক পুরোনো বেসামরিক বিমানবন্দর দ্রুত সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এটি মূলত বেসামরিক ব্যবহারের জন্যই চালু হবে, তবে জরুরি অবস্থায় বা যুদ্ধে সামরিক বিমানের ওঠানামা ও জ্বালানি সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কৈলাশহর বিমানবন্দর শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ নয়, এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এখান থেকেই ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে পরিচিত বাংলাদেশের প্রথম প্রতিরোধ বিমানদল অভিযান শুরু করেছিল। ভারতের বিমান বাহিনীর অধীনে পরিচালিত এই ফোর্সে ছিল কানাডার তৈরি ডিএইচসি-৩ অটার, ফ্রান্সের তৈরি আলুয়েত হেলিকপ্টার ও মার্কিন ডিসি-৩ ড্যাকোটা। এই কিলো ফ্লাইট পরবর্তীতে বাংলাদেশের নিজস্ব বিমান বাহিনী গঠনের ভিত্তি তৈরি করে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে তিনি এখনও নির্বাচন ঘোষণা করেননি এবং তার সরকার ভারতের তুলনায় চীন ও পাকিস্তানের প্রতি বেশি মনোভাবাপন্ন বলে মনে করছে দিল্লি।
এই অবস্থায়, ভারতের সীমান্তের একেবারে কোলঘেঁষে চীনের সহায়তায় একটি বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলে তা কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কৈলাশহর বিমানবন্দর চালুর মাধ্যমে ত্রিপুরার বিমান যোগাযোগও উন্নত হবে। বর্তমানে রাজ্যের একমাত্র কার্যকর বিমানবন্দর হচ্ছে আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর।