ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধই কী প্রাধান্য পাবে জি-৭ সম্মেলনে?

কানাডায় এই সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় হওয়ার কথা ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ।
আলবার্টার রকি পর্বতমালায় তিনদিনব্যাপী এই শীর্ষ সম্মেলনে জি-৭ দেশগুলোর নেতারা এখন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে বিষয়েই সময় ব্যয় করবেন। কারণ ইসরায়েলের ইরানে হামলার ঘটনায় বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। খবর বিবিসির।
যদিও ইসরায়েল এই হামলা মার্কিন অনুমতি ছাড়াই চালিয়েছে, তবু জি-৭ নেতারা জানেন—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর প্রকৃত প্রভাব রাখতে পারেন।
মতভেদের শঙ্কা
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত জি-৭ গ্রুপের নেতাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শান্তি ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ইসরায়েলি হামলাকে "অসহনীয়" ও "চরম দুঃখজনক" বলেছেন।
অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হামলাকে "চমৎকার" বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পকে খুশি রাখতে সাবধান কানাডা
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিব্রতকর। জি-৭ এর ৫০ বছর পূর্তিকে ঘিরে তিনি এমন একটি সম্মেলন চেয়েছিলেন যেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বিরোধ না হয়। সম্মেলনের মূল আলোচ্যসূচি ছিল—জ্বালানি নিরাপত্তা, খনিজ সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষা, ডিজিটাল রূপান্তর ও বন আগুন নিয়ন্ত্রণ।
জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশবিষয়ক বিতর্ক এড়াতে এবার কোনও সম্মেলন-উপসংহার প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে নেতারা স্বল্প ও কর্মমুখী বিবৃতি দেবেন।
পরিবার ভাঙছে?
২০১৮ সালের কানাডায় অনুষ্ঠিত শেষ জি-৭ সম্মেলনে ট্রাম্পের সঙ্গে বড় ধরণের বিরোধ হয়েছিল। এবারও অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই সম্মেলন হবে এক ধরনের ‘অস্বস্তিকর পারিবারিক পুনর্মিলন’।
এবারের সম্মেলনে নতুন মুখ যেমন যুক্তরাজ্যের কিয়ার স্টারমার, জার্মানির চ্যান্সেলর মার্জ, জাপানের শিগেরু ইশিবা ও স্বয়ং কার্নি যোগ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ ও ইতালির মেলোনির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক ইতিবাচক। ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নেতারাও যোগ দিচ্ছেন, তবে তারা দ্বন্দ্বে জড়াবেন না বলেই ধারণা।
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ নিয়ে পরীক্ষা
জি-৭ গঠিত হয়েছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে। অথচ এখন এই গ্রুপেরই এক সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র, নিজের মিত্রদের ওপর শুল্ক আরোপ করছে। বিশ্বনেতারা ট্রাম্পকে বোঝাতে চাইবেন যে, যদি তিনি চীনের বিরুদ্ধে ঐক্য চান, তবে মিত্রদের শাস্তি দিলে তা সম্ভব নয়।
রাশিয়াকে চাপে রাখতে ইউক্রেন ইস্যু
জি-৭ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও অংশ নিচ্ছেন। তিনি এবং তার মিত্ররা চাইছেন রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।
ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন নিষেধাজ্ঞার একটি প্রস্তাব এনেছে, যার লক্ষ্য মস্কোর জ্বালানি আয়, ব্যাংক এবং সামরিক খাত। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের নেতৃত্বে আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে রাশিয়ার তেল কিনছে এমন দেশগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে—বিশেষ করে চীন ও ভারতের বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তবে তেলের দাম কমে যাওয়ায় সেই পদক্ষেপের কার্যকারিতা কমে গেছে। ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কমিশন দাম আরও কমিয়ে ৩০-৪৫ ডলারে নামাতে চায়। কিন্তু ট্রাম্পের অবস্থান এই বিষয়ে পরিষ্কার নয়।

জি-৭ কি আর নেতৃত্ব দিতে পারবে?
কখনো বলা হতো, জি-৭ হলো "মুক্ত বিশ্বের স্টিয়ারিং কমিটি"। তবে এই সপ্তাহে হয়তো বোঝা যাবে—এই ক্লাবের 'ড্রাইভিং' দিনগুলো এখন শেষের পথে কিনা।