গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজাজুড়ে বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। সোমবার (১৬ জুন) ভোর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। এদের মধ্যে ৩৮ জন ছিলেন সেই ক্ষুধার্ত পরিবারের সদস্য, যারা দক্ষিণের রাফাহ অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আল-জাজিরাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সর্বশেষ এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত বিতর্কিত স্থানগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পরিচালিত এই কেন্দ্রগুলোকে সমালোচকরা ইতোমধ্যেই ‘মানব কসাইখানা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি যখন আঞ্চলিক শত্রু ইরানের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিনিময় করছে, তখনও ইসরায়েলি বাহিনী তাদের মারাত্মক আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরায়েলের ‘যুদ্ধের কৌশল ও পদ্ধতি গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ, অযৌক্তিক দুর্ভোগ ডেকে আনছে’।
রাফাহতে খাবার সংগ্রহের চেষ্টাকালে হেবা জৌদা ও মোহাম্মদ আবেদ নামে দুই ফিলিস্তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, জিএইচএফ কেন্দ্র থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে অবস্থিত ফ্ল্যাগ রাউন্ডঅবাউটে ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার (১৬ জুন) ভোর ৪টার দিকে অপেক্ষারত জনতার ওপর গুলি চালায়। এটি ছিল সেখানে গুলিবর্ষণের ধারাবাহিক ঘটনার অংশ। তারা জানান, লোকজন আত্মরক্ষার জন্য মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

গত সপ্তাহে পরিবারের জন্য খাবার আনতে বেশ কয়েকবার বিপজ্জনক পথ পাড়ি দেওয়া জৌদা বলেন, ‘সব দিক থেকে আগুন আসছিল।’ তিনি এপিকে আরও বলেন, ‘দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তার বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ভলকার তুর্ক বলেন, ‘ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ও জীবন রক্ষাকারী সাহায্য আটকে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে পৌঁছাতে মরিয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মারাত্মক হামলার বিষয়ে আমি অবিলম্বে, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। ইসরায়েলি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরক্তিকর, অমানবিক বক্তব্য সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৫ হাজার ৩৬২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে। জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে বিপজ্জনক বিতরণ স্থানগুলোর কাছে ইতোমধ্যেই ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত ও দুই হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।