ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার ৭২ ঘণ্টা পর থেকেই দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, স্থাপনাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে—ক্ষতি মাঝারি থেকে গুরুতর। ইরান হামলার আগেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
হামলার পর পরই ট্রাম্প বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অপর দিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন-এর ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ক্ষতি মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে ও এটি ইরানকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, হামলার আগেই ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল।
সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ বলেছেন, স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে ও পুনর্গঠনে বছরের পর বছর লাগবে।
আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ধ্বংস করাটা বেশি কথা হবে, তবে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।
এই ভিন্ন ভিন্ন মতামতের কারণে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার আসল চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।
ইরান কী চায়?
মার্কিন হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বেশিরভাগ পারমাণবিক স্থাপনা এখনও অক্ষুণ্ন আছে। ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামিও বলেছেন, পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই ছিল ও আমাদের লক্ষ্য উৎপাদনে কোনো বাধা না রাখা।
জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
২০১৫ সালের চুক্তি (জেসিপিওএ) কি ফিরিয়ে আনা যাবে?
২০১৫ সালে ইরান, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পরাশক্তির মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) হয়েছিল। এই চুক্তি ইরানকে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দিত, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তিটি বাতিল করেন, ইরানও এক বছর পর সরে আসে। তবে, তার আগে এই চুক্তি ভালোভাবে কাজ করছিল।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কখনও জেসিপিওএ-তে ফিরবেন না, তবে তার নিজের মতো একটি নতুন চুক্তি হতে পারে। প্রশ্ন হলো, এবার ইসরায়েল কি তাতে সমর্থন দেবে? আর ইরান কি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকার পাবে? ট্রাম্প মনে করেন, নতুন কোনো চুক্তির প্রয়োজন নাও হতে পারে।
এদিকে, ইরানের শক্তিশালী অভিভাবক পরিষদ সম্প্রতি আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার একটি সংসদীয় বিল অনুমোদন করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, ইরান এখনই কোনো আন্তর্জাতিক তদারকি মানতে রাজি নয়।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চায়, তবে তারা সমৃদ্ধ উপকরণ আমদানি করতে পারে। কিন্তু যদি তারা নিজেরাই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার উপর জোর দেয়, তবে সেটি সমস্যাযুক্ত হবে।

ট্রাম্প সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বলেছেন, তিনি চান ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ছেড়ে দিক। তিনি দাবি করেছেন, ইরান কখনও তাদের পারমাণবিক সুযোগ-সুবিধা পুনর্নির্মাণ করবে না! যদি ইরান আবারও পারমাণবিক ব্যবসায় জড়িত হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র আবারও হামলা চালাবে, অথবা ইসরায়েল হামলা করবে।
ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইসরায়েল ও ইরান কি শিগগিরই আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, আমি মনে করি কোনো দিন এটি হতে পারে। সম্ভবত এটি শিগগিরই শুরু হতে পারে।’