গৃহযুদ্ধের মধ্যে সুদানে সোনার খনি ধসে ১১ জন নিহত

সুদানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী সোনার খনি ধসে অন্তত ১১ জন খনি শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ইতোমধ্যে তৃতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের যুদ্ধ তহবিলের বড় অংশই সুদানের সোনা শিল্প থেকে আসছে। খবর আল জাজিরার।
রোববার (২৯ জুন) এক বিবৃতিতে সুদানিজ মিনারেল রিসোর্সেস কোম্পানি (এসএমআরসি) জানায়, কিরশ আল-ফিল খনির একটি “কারিগরি শাফট”-এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। খনিটি উত্তর-পূর্ব রেড সি প্রদেশের হোয়েইডের প্রত্যন্ত মরু এলাকায়, যা এসএএফ নিয়ন্ত্রিত আতবারা ও হাইয়ার মধ্যে অবস্থিত।
আহত সাতজনকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এসএমআরসি।
সংস্থাটি আরও জানায়, তারা এর আগেই খনির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল এবং “জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল।”
সরকারি ও এনজিও সূত্র বলছে, সুদানের প্রায় সব সোনার বাণিজ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মাধ্যমে হয়। ইউএই-র বিরুদ্ধে আরএসএফকে অস্ত্র সহায়তার অভিযোগ থাকলেও তারা তা অস্বীকার করেছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে সুদানের অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়েছে। তারপরও সামরিক সমর্থিত সরকার ২০২৪ সালে রেকর্ড ৬৪ টন সোনা উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে।
আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদান, যেখানে সোনা উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থান থাকলেও বেশিরভাগ সোনা ক্ষুদ্র ও কারিগরি খনিগুলো থেকে আসে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই খনিগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থা একেবারে নেই এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে আশেপাশের এলাকায় নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
এসব খনিতে দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর আগেও ২০২৩ সালে এক খনিধসে ১৪ জন এবং ২০২১ সালে ৩৮ জন নিহত হয়েছিল।
যুদ্ধ শুরুর আগে এই কারিগরি খনিগুলোতে ২০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ছিল বলে জানিয়েছেন খনি খাতের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখন উভয় পক্ষের উৎপাদিত সোনা চাদ, দক্ষিণ সুদান ও মিসরে পাচার হয়ে ইউএইতে পৌঁছায়, যারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা রপ্তানিকারক দেশ।

গৃহযুদ্ধের কারণে সুদানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি সংকটে রয়েছে সুদান। ৪০ লাখের বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
এখন সুদানের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল রাজ্য খার্তুম এসএএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । আর পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ, বিশেষত দারফুর, আরএসএফের দখলে রয়েছে।