দালাই লামার উত্তরাধিকার বিতর্ক কি শেষ হলো?

তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা জানিয়েছেন, তিনি ১৩০ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ আরও ৪০ বছর বেঁচে থাকার আশা করছেন। নিজের ৯০তম জন্মদিনের ঠিক আগে তিনি এই কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজের উত্তরাধিকার নিয়ে চলা ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন।
তিব্বতি বৌদ্ধ এই আধ্যাত্মিক নেতা শনিবার (৫ জুলাই) তার অনুসারীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। রোববার (৬ জুলাই) তার ৯০তম জন্মদিনের আগে তার দীর্ঘায়ু কামনায় এই প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল।
হাজার হাজার অনুসারীর প্রার্থনার নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যখন মন্ত্রপাঠ, ঢোল ও শিঙার শব্দ বাজছিল তখন তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, অবলোকিতেশ্বরের (একজন বৌদ্ধ আধ্যাত্মিক রক্ষক) অবিরাম আশীর্বাদে আমি আরও ৩০ থেকে ৪০ বছর বেঁচে থাকার আশা করি, যাতে সংবেদনশীল প্রাণী ও বুদ্ধ ধর্মের সেবা করে যেতে পারি। দালাই লামা এর আগে গত ডিসেম্বরে রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন, তিনি হয়তো ১১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারেন।
উত্তরাধিকার নিয়ে দালাই লামার নিশ্চিতকরণ
দালাই লামা নিশ্চিত করেছেন, পুরনো ঐতিহ্য মেনেই তার উত্তরসূরি নির্বাচিত হবেন। এর মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলা এই শতাব্দী-প্রাচীন পদ নিয়ে সব জল্পনার অবসান হলো।
বুধবার (২ জুলাই) এক ভিডিও বার্তায় দালাই লামা বলেন, গাদেন ফোদ্রাং ফাউন্ডেশন নামের যে প্রতিষ্ঠানটি তিনি সংরক্ষণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটির ভবিষ্যতের পুনর্জন্মকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে।
দালাই লামা আরও জোর দিয়ে বলেন, তিব্বতি বৌদ্ধ নেতারাই তার উত্তরসূরির সন্ধান করবেন, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো কোনো অধিকার অন্য কারও নেই।
১৪তম দালাই লামা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বৌদ্ধদের কাছ থেকে এই পদটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক বার্তা পেয়েছেন। বুধবার তিনি ধর্মশালায় তিন দিনের ধর্মীয় সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন।
চীনের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ বিদ্রোহের পর তিব্বত থেকে পালিয়ে এসে ১৯৫৯ সাল থেকে দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় তিব্বতি লেখক ও কর্মী তেনজিন সুন্দু দালাই লামার ঘোষণাকে চীনের জন্য মুখে আঘাত বলে বর্ণনা করেছেন। চীন তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পরিচালনা করে তাই তারা দাবি করে— দালাই লামার উত্তরসূরি নিয়োগের ক্ষমতা তাদের রয়েছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দালাই লামাকে চীন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিহিত করেন। তিনি এর আগে বেইজিংকে দালাই লামার পুনর্জন্ম ব্যবস্থা তো দূরের কথা লামাদের পুনর্জন্ম ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ না করার জন্য সতর্ক করেছিলেন।
দালাই লামার মন্তব্যের জবাবে চীন বলছে, দালাই লামার উত্তরাধিকার বেইজিংয়ের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। এটি সোনার কলস থেকে লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এই কলসটি চীনের হাতে রয়েছে।
দালাই লামা আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন, যখন কোনো কিছু অসৎভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন এর কোনো আধ্যাত্মিক গুণ থাকে না।