হুথি হামলায় লোহিত সাগরে জাহাজ ডুবে নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫

লোহিত সাগরে হুথিদের হামলার পর লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। এতে অন্তত চারজন নাবিক নিহত হয়েছেন এবং আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জাহাজটি থেকে ৬ জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিসের মালিকানাধীন ‘ইটারনিটি সি’ নামের জাহাজটিকে সোমবার (৭ জুলাই) একটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এতে অন্তত চারজন নাবিক নিহত হন এবং আরও ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
হুথিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে জানান, জাহাজটি ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল এবং গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবেই এ হামলা চালানো হয়। তিনি আরও দাবি করেন, হুথিরা নাবিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে এবং নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করেছে।
হুথিরা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে হামলার দৃশ্য, জাহাজে বিস্ফোরণ এবং ইয়েমেনি নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার আহ্বান শোনা যায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র হুথিদের অভিযুক্ত করেছে যে, তারা জীবিত উদ্ধার হওয়া অনেক নাবিককে অপহরণ করেছে এবং তাদের অবিলম্বে নিরাপদে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইউকেএমটিও জানিয়েছে, জাহাজটি “গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন” হয়েছে এবং “চালনা ক্ষমতা হারিয়েছে।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘অপারেশন অ্যাসপিডেস’ জানিয়েছে, তারা জাহাজের ২২ সদস্যবিশিষ্ট ক্রু ও ৩ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা দলের মধ্যে ৫ জন ফিলিপাইন ও ১ জন ভারতীয় নাগরিককে উদ্ধার করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক চেম্বার অব শিপিং এবং বিআইএমসিও-সহ শিপিং খাতের শীর্ষস্থানীয় সংগঠনগুলো এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং সমুদ্র নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, “এই হামলাগুলো সাধারণ নাবিকদের জীবনের প্রতি নির্মম অবহেলার প্রতিফলন।”
ইটারনিটি সি-তে হামলার একদিন আগেই হুথিরা ‘ম্যাজিক সিস’ নামের আরেকটি কার্গো জাহাজে হামলা চালায়, যেটি পরে ডুবে যায়। তবে ওই ঘটনার সব নাবিককে উদ্ধার করা হয়।
লোহিত সাগরে এই হামলাগুলো ২০২৪ সালের শেষ ভাগের পর এই প্রথম এবং তা আবার নতুন এক সামরিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে হুথিরা ১০০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে দুটি জাহাজ ডুবে যায়, একটি দখল করে এবং অন্তত চারজন নাবিক নিহত হন।

ইসরায়েল ও হুথিদের পাল্টাপাল্টি হামলা
রোববার ইসরায়েল হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের হোদাইদা, রাস ইসা ও আস-সালিফ বন্দরে বিমান হামলা চালায়। পাশাপাশি রাস কাথিব বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং হুথিদের দখলে থাকা গ্যালাক্সি লিডার জাহাজের রাডারেও হামলা চালানো হয়। এর জবাবে হুথিরাও ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, “এই হামলাগুলো ইরান-সমর্থিত হুথিদের দ্বারা আঞ্চলিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য চলমান হুমকি।” তারা জানিয়েছে, হুথিদের আক্রমণ থেকে বাণিজ্যিক শিপিং রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে থাকবে।
উল্লেখ্য, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও হুথিদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল, যেখানে হুথিরা মার্কিন জাহাজে হামলা বন্ধ করতে সম্মত হয়। তবে তারা স্পষ্ট করে বলেছে, এই সমঝোতা ইসরায়েল-সম্পর্কিত জাহাজে হামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।