চার দশকের সংঘাতের অবসান, অস্ত্র ধ্বংস করছে পিকেকে

তুরস্কের বিরুদ্ধে দুমাস আগে কুর্দি বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ করার ঘোষণার পর আজ শুক্রবার (১১ জুলাই) কুর্দিশ ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ৩০ জন যোদ্ধা ইরাকের কুর্দিস্তানে তাদের অস্ত্র ধ্বংস করেছে। এর ফলে, সংঘাতের পথ ছেড়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে উত্তরণে একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর এএফপির।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরস্ত্রীকরণের এই পদক্ষেপ পিকেকের সামরিক দুর্বলতাকে আড়াল করার মতো একটি ঘটনা এবং একইসঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা বিদ্রোহের বিরুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী দাবির সুযোগ করে দিয়েছে।
ইরাকের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার একটি গুহায় সংক্ষিপ্ত এক অনুষ্ঠানে পিকেকে মিলিশিয়ার ৩০ সদস্যের একটি দল আজ তাদের অস্ত্রগুলো পুড়িয়ে ফেলে। ইরাকের শায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের সুলাইমানিয়া শহরের কাছে একটি গুহায় পিকেকের কমান্ডার পদমর্যাযাদার ৩০ জন যোদ্ধাকে এই সময় অস্ত্র পোড়াতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধি।
বার্তা সংস্থা ফিরাত জানিয়েছে, সকাল থেকেই বেশকিছু গাড়ি ক্যাসিনে নামের ওই গুহার সামনে অবস্থান করছিল। এখানে একসময় কুর্দিদের একটি ছাপাখানা ছিল আর প্রতীকী এই স্থানটিকে ঘিরেই অনুষ্ঠিত হয় অস্ত্র ধ্বংসের আনুষ্ঠানিকতা।
১৯৮৪ সালে আব্দুল্লাহ ওকালানের প্রতিষ্ঠিত পিকেকে তুরস্কে রক্তক্ষয়ী হামলা চালানোর মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষের জীবননাশ হয়েছে। চার দশক পরে এ বছরের মে মাসে পিকেকে সংখ্যালঘু কুর্দিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পথে আসার কথা জানিয়ে সশস্ত্র সংঘাতের পথ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে কারান্তরীণ থাকা আব্দুল্লাহ ওকালানের ডাকেই এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয় পিকেকে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই পিকেকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কমান্ডার বলেন, সৌহার্দের প্রকাশ ঘটাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত পিকেকের একদল যোদ্ধা তাদের অস্ত্রশস্ত্র পুড়িয়ে ফেলবে বা ধ্বংস করে দেবে।
এদিকে, অস্ত্রসমর্পণের এই অনুষ্ঠানের আগে ইরাকের পেসমেরগা কুর্দি ঘাঁটির কাছে সুলাইমানিয়া ও কিরকুক এলাকার আকাশে দুটি ড্রোন উড়তে থাকলে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। ভোরের দিকে অবশ্য ড্রোন দুটিকে গুলি করে মাটিতে নামিয়ে আনা হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।