ইউক্রেনের দনিপ্রোপেত্রভস্কে প্রবেশ করেছে রুশ সেনারা

রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রধান অঞ্চল দনিপ্রোপেত্রভস্কে প্রবেশ করেছে এবং অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
দনিপ্রো অপারেশনাল-স্ট্র্যাটেজিক গ্রুপের কর্মকর্তা ভিক্টর ত্রেহুবভ বিবিসিকে বলেন, “দনিপ্রোপেত্রভস্কে এটাই সবচেয়ে বড় আকারের প্রথম আক্রমণ।” তবে তিনি স্পষ্ট করে জানান, রুশ অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
রাশিয়া গত গ্রীষ্ম থেকেই দাবি করে আসছে যে তারা অঞ্চলটিতে প্রবেশ করেছে। জুন মাসে তারা আক্রমণ শুরুর কথাও বলেছিল। তবে সর্বশেষ ইউক্রেনীয় প্রতিবেদনগুলো বলছে, রুশ সেনারা কেবল সীমান্ত অতিক্রম করেছে, তার বেশি কিছু নয়।
ইউক্রেনের ডিপস্টেট ম্যাপিং প্রকল্প মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দাবি করে, রুশ সেনারা দনিপ্রোপেত্রভস্কের ভেতরে দুটি গ্রাম (জাপোরিজকে ও নভোহ্রিহোরিভকা) দখল করেছে। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, তারা এখনও জাপোরিজকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং নভোহ্রিহোরিভকায় লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে দনিপ্রোপেত্রভস্ককে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করেনি, যদিও রাজধানী দনিপ্রোসহ বড় শহরগুলোতে হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে এ অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল তিন মিলিয়নের বেশি এবং এটি ডনবাসের পর ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহৎ শিল্পকেন্দ্র।
রুশ সেনারা ধীর গতিতে এগোলেও দোনেস্ক অঞ্চলে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। চলতি মাসের শুরুতে তারা ডোব্রোপিলিয়ার কাছে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ভেদ করে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল, যদিও পরে তাদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়।
আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরও যুদ্ধবিরতি বা শান্তি আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিন নাকি ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন যদি দোনেস্কের অবশিষ্ট অঞ্চল ছেড়ে দেয় তবে তিনি যুদ্ধ থামাতে রাজি। তবে কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার লক্ষ্য অনেক বড়—দনিপ্রো নদীর পূর্বের সমগ্র ইউক্রেন দখল করা।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস সতর্ক করে বলেছেন, “রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড দেওয়া মানে ফাঁদে পড়া। আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া, তারা কোনো ছাড় দেয়নি।”
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় পুতিন ও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের কথা উঠলেও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও কোনো এজেন্ডা প্রস্তুত হয়নি।
এদিকে জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কিয়েভে ব্রিটিশ সেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল স্যার টনি রাডাকিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জও বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ইউক্রেনের সেনাদের দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন সরকার পুরুষদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করেছে। এখন থেকে ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী পুরুষরা বিদেশে যেতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্বিরিডেনকো জানিয়েছেন, এ বয়সীরা সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের আওতায় পড়েন না। বর্তমানে প্রায় ৫.৬ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় পুরুষ বিদেশে অবস্থান করছেন।