Skip to main content
NTV Online

শিল্প ও সাহিত্য

শিল্প ও সাহিত্য
  • অ ফ A
  • গদ্য
  • কবিতা
  • সাক্ষাৎকার
  • গ্রন্থ আলোচনা
  • বইমেলা
  • চিত্রকলা
  • শিল্পসাহিত্যের খবর
  • পুরস্কার ও অনুষ্ঠান
  • চলচ্চিত্র
  • আলোকচিত্র
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • শিল্প ও সাহিত্য
ছবি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ড. ইউনূস

ভিডিও
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৩২
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১১
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১১
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৫
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৫
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৯
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯১
ফাউল জামাই : পর্ব ৯১
বিধান রিবেরু
১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
বিধান রিবেরু
১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
আপডেট: ১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
আরও খবর
ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব ৪-৬ আগস্ট
‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে : হানিফ
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠল
সিলেট চলচ্চিত্র উৎসবে ৩ হাজারের বেশি চলচ্চিত্র জমা
সিনেমার ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে...

মৃণালের কোরাস : উদারনীতির মুখাগ্নি

বিধান রিবেরু
১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
বিধান রিবেরু
১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
আপডেট: ১৪:৪৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

মৃণাল সেনের কলকাতা ত্রয়ীকে মোটাদাগে রাজনৈতিক চলচ্চিত্র ত্রয়ী বলা হলেও আমি মনে করি এর পরের ‘কোরাস’ (১৯৭৫) ছবিটিকে বাদ দিলে এই আগের তিনটি ছবি সম্পূর্ণ হয় না। আসলে মৃণাল চৌকো ছবি বানিয়েছেন, যেটির শেষ বিন্দুটির নাম ‘কোরাস’। এই ছবিতেই তিনি নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চূড়ান্ত বোঝাপড়া পেশ করেছেন। আমার ধারণা, মৃণালের এই পেশকৃত বক্তব্যের বিপরীতে নানা বিষয়ে মিল থাকা সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ (১৯৮০) শোচনীয়ভাবেই বুর্জোয়া উদারনীতির পক্ষে গেছে। এই বিষয়টি নিয়েই দুকলম লিখছি আজ।

১.

‘ইনটারভিউ’ (১৯৭০), ‘কলকাতা ৭১’ (১৯৭২) ও ‘পদাতিক’ (১৯৭৩)—এই তিন ছবিতে আমরা দেখি দোদুল্যমান মধ্যবিত্ত কী করে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, কী করে তরুণরা সমাজের দারিদ্র্য দূর করতে শোষকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় এবং আত্মসমালোচক হয়ে ওঠে। ‘ইনটারভিউ’ ছবিতে দেখা যায় আরেকটু বেশি আয়ের আশায় হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছে এক তরুণ, সীতার সোনার হরিণ চাওয়ার মতো করে। তরুণটির নাম রণজিৎ। সে যখন দেখল ঔপনিবেশিক প্রভুদের পোশাক না থাকার কারণে তার সোনার হরিণ হাত ফসকে যাচ্ছে, তখন সে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ক্ষুব্ধ হয়ে সে সাম্রাজ্যবাদের রূপক ভিনদেশি পোশাক-আশাক ছিঁড়ে ফেলে।

‘কলকাতা ৭১’ ছবিতে রণজিতের রাগটিই যেন অন্য যুবকের ভেতর জারিত হয়। এই যুবক আবার সাক্ষী দিতে থাকে হাজার বছরের শোষণ ও বঞ্চনার। একে একে প্রমাণও হাজির করতে থাকে দর্শকের সামনে। দারিদ্র্য, বঞ্চনা, অভাব, শোষণ ও ক্ষুধার নানা রূপ মৃণাল আমাদের এই ত্রয়ীর দ্বিতীয় ছবিতে দেখান। আর জিজ্ঞেস করেন, এসব দেখেও কী করে আমরা নির্বিকার থাকি? আমাদের কি লজ্জা হয় না? চারটি ভাগে ভাগ করা এই ছবির প্রথম ভাগে দেখা যায়, একটি অতিদরিদ্র পরিবার ঝড়ঝঞ্ঝার রাতে আশ্রয় নেয় এক অট্টালিকার বাইরের বারান্দায়, যেখানে একটি কুকুরও আশ্রিত। পরের ভাগে দেখি, দুর্ভিক্ষের বাজারে স্বয়ং মা বাধ্য হচ্ছেন মেয়েকে বিকিয়ে দিতে। তৃতীয় ভাগে দেখি, ক্ষুধার তাড়নায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চাল চোরাচালান করছে কিশোরের দল। আর শেষ ভাগে দেখানো হয় বুর্জোয়াদের এলিট পার্টি। যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে দেয়ালে টাঙিয়ে কুম্ভীরাশ্রু ফেলে লোকজন, আর উদ্বাস্তুদের জন্য সাহায্য তোলাকে মনে করে নয়া ফ্যাশন। এই নির্লজ্জ, বেহায়াপনার তীব্র সমালোচনা করেন মৃণাল, ছবির সংলাপ, শব্দ ও সম্পাদনা দিয়ে। একটি অভিঘাত ঘটাতে চান তিনি দর্শকের চৈতন্যে। প্রশ্ন জাগরূক রাখতে চান, এই দারিদ্র্য ও শোষণের পাশাপাশি চলা কি বন্ধ হবে না?

‘পদাতিক’ ছবিতে আগের ছবির প্রতিবাদী যুবকটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে দৌড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি যুক্ত হয়। তরুণরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, গুলি খেয়ে মরছে, তারপরও তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠছে। এই পর্বে এসে মৃণাল আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন সুমিত নামে এক যুবকের সঙ্গে। মৃণালের ‘এল ডোরাডো’ কলকাতা ষাটের দশকের দ্বিতীয়ভাগে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠেছিল, যেভাবে নকশালবাড়ির আন্দোলন শহুরে যুবকদের সশস্ত্র লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল, তাতে স্থির থাকতে পারেননি মৃণাল। সত্তরের দশকের গোড়াতেও সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। একদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ; অন্যদিকে, আন্দোলন, প্রতিবাদ, গুলি, উদ্বাস্তু মানুষের ঢল। এমন ঝঞ্ঝামুখর পরিবেশে কোনো প্রকৃত শিল্পীই কলাকৈবল্যবাদ করতে পারেন না। মৃণালও পারেননি। তাই তিনি যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন। নাম দেখেই তো বোঝা যায়—‘পদাতিক’। লড়াইটা চালাতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই, নয়তো ছবির শেষে সুমিতের বাবা ছেলেকে বলতেন না, সাহসী হও। এই যে অনুমোদন, পূর্ব প্রজন্মের কাছ থেকে, এ থেকেই প্রমাণ হয়, মৃণাল বলতে চাইছেন সংগ্রামটা জারি রাখতে হবে। বাবার কাছ থেকে সবুজসংকেত পেয়ে, সেই দৃশ্যে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে  সুমিতের ঠোঁটে।

এরই ভেতর মৃণাল সুমিতের মধ্য দিয়ে প্রশ্ন করছেন, যে উপায়ে লড়াইটা হচ্ছে সেটা কতটুকু সহি উপায়? জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করতে না পারলে সেটি ব্যর্থ হতে বাধ্য। সুমিত বলতে চাইছিল, তার দল ও নেতাদের যুদ্ধের পদ্ধতি জনগণের সম্মতি আদায় করতে পারছে না। তাই এটি নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। এই সন্দেহ জাগরূক রেখেই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় উঁকি দেয় ছবিটির শেষ স্থির ফ্রেমে, সেই একচিলতে হাসির ভেতর। এই ছবিতে আত্মসমালোচনা আছে, লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞাও আছে। তবে লড়াইয়ের শেষটা আছে চতুর্থ ছবি ‘কোরাসে’।

২.

‘কোরাস’ শুরু হয় কীর্তন সংগীত দিয়ে। ছড়াগুলো রূপকাশ্রিত। সেই রূপকে আছে দারিদ্র্যকে আড়াল করতে ধর্মের দোহাই দেওয়ার কথা বা অন্যভাবে বললে, দারিদ্র্যের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপের ছলনা। কয়েকটি পঙক্তির উদাহরণ না দিলেই নয় :

(ক) অভাব না থাকে যদি/ থাকে না ঈশ্বর, (খ) অভাব সৃজিয়া বিধি ধর্মে রাখে মন/ এইভাবে ভক্ত দেবে প্রবাহ মিলন, (গ) অভাবের বরণ পাবে দেবের চরণ, (ঘ) কত তন্ত্র কত মন্ত্র কত ভগবান/ অভাব রচেন যিনি তিনি শক্তিমান… ইত্যাদি।

সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় একটি দুর্গের সঙ্গে। যেখানে চেয়ারম্যান আছেন, আর আছে তার বোর্ড অব ডিরেক্টর্স। প্রতিষ্ঠানের জন্য, মানে ওই দুর্গটির জন্য একশ জন লোক দরকার। এজন্য দরখাস্ত পড়েছে ত্রিশ হাজার। এখন এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে কোন উপায়ে নিয়োগ দেওয়া হবে, নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করার পদ্ধতিই বা কী হবে এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান চেয়ারম্যান ও বোর্ডের সদস্যরা। এরই মধ্যে দরখাস্ত জমা দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সারি হয়ে যায় দুর্গের বাইরে। চাপের ভেতর পড়ে যায় কর্তৃপক্ষ। হিমশিম খায় নিরাপত্তাকর্মীরা। বেলা যত গড়াতে থাকে ততই চাপ বাড়তে থাকে, কিন্তু এত লোককে কী করে সামলানো যায়, সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করতে না পারায়, দরখাস্ত জমা নেওয়া মুলতবি রাখা হয়। এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দরখাস্ত জমা দিতে আসা নানা বয়সী পুরুষ ও নারী, কারণ দূরদূরান্ত থেকে তারা এসেছেন এবং অপেক্ষা করে ছিলেন দীর্ঘক্ষণ।

অপেক্ষারতদের ক্ষোভ প্রশমন করতে ফাটানো হয় কয়েকটি বোমা, প্রহরীরা চালায় লাঠি, ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে সকলে। সাংবাদিক ছুটে আসে। তার দরকার খবর। কে পড়ল, কে মরল, কে বাঁচল, সেটা বড় নয়, বড় ধরনের একটা ‘গণ্ডগোল’ হচ্ছে, সেটাই বড় ব্যাপার। কারণ পত্রিকার সম্পাদকও মনে করেন তাদের দরকার ‘সেনসেশন’। বেকারত্বের কারণে মর্মন্তুদ এই ঘটনার খবরটি যেন লোকে খায়, সেজন্য আবেদনকারীদের আলাদা আলাদা করে সাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিক। এই সাক্ষাৎকারের হাত ধরেই আমরা প্রবেশ করি কয়েকজনের জীবনে।

দেখা যায় একজন চাকরিপ্রার্থী, নাম বাদল, সে গ্রাম থেকে এসেছে। কেন এসেছে? কারণ হিসেবে মৃণাল দেখান গ্রামে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম সংকট। সেখানে শিক্ষিত যুবকদের করার মতো কাজ নেই, কৃষকরাও জিম্মি মহাজন, জোতদারের কাছে। মহাজন আবার বাদলের পিসে হয়, মানে ফুপা। সরকারের দেওয়া ধান ও অনুদান সকলই আত্মসাৎ করে দেন এই পিসে ছানা মণ্ডল। শহরে যেহেতু চাকরি হচ্ছে না, তাই মণ্ডলের আড়তেই লেখালেখির কাজ নেয় বাদল। সে এমনিতে মণ্ডলকে পিসে ডাকলেও, চাকরি নেয়ার পর ‘বাবু’ ডাকা শুরু করে, মানে ‘বস’। আর এতে বেশ প্রীত হয় মণ্ডল। পিসে থেকে বাবু হয়ে ওঠা এই জোতদারের গোপন কারবারের কথা বাদল জানে। এমনকি সরকারি লোকও অবগত এসব ব্যাপারে। কিন্তু তাতেও কোনো কিছু যায় আসে না মণ্ডলের, কারণটা সকলেরই জানা, ঘুষ-বাণিজ্য। গরিব মানুষের প্রাপ্য শস্য ও অর্থকড়ি লোপাট করে দেওয়া এই মণ্ডলকেই পরে দেখা যায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে।

আরেকজনের কাহিনী দেখা যায়, যার বাবা একজন শ্রমিক, নাম মুখুজ্যে। এই মুখুজ্যে একসময় শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তখন তার কণ্ঠে গান ভাসত ‘আজাদি কা ডাংকা বাজা’, কিন্তু দেখা গেল এই শ্রমিকটিই একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এমনকি তার কারখানায় যখন ধর্মঘট শুরু হয়, তখন তিনি মালিকের কাছে মুচলেকা দিয়ে কারখানায় কাজ করতে থাকেন। ধর্মঘটে শামিল হন না তিনি। এক সতীর্থ এর কারণ জানতে চাইলে মুখুজ্যে ক্রুদ্ধ স্বরে বলেন, ‘একটা কারখানা, তিনটা ইউনিয়ন, ইউনিয়নবাজি করো, ঝগড়া করো, কাটাকাটি করো। আমি নিজে লিখব নিজের ডিমান্ড।’ এই কথা যেন মৃণালের সেই কথা প্রতিধ্বনি, যেখানে তিনি সমালোচনা করছেন বাম দলগুলোর ভেতরকার বিভেদকে।

মৃণাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা সবসময় sectarianism এর বলি হয়ে দাঁড়াই, সবসময়েই আমরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। এবং বিচ্ছিন্নতা মানেই হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ব্যাপারটা ধসে পড়া এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আরো চাগাড় দিয়ে ওঠা, আরো জোরদার হওয়া। (সেন ২০১৫ : ৯২)

ইউনিয়নগুলোর বিভক্তির ভেতর না জড়িয়ে মুখুজ্যে নিজের দাবি জানাতে নিজেই একদিন সটান দাঁড়িয়ে যান মালিকের গাড়ির সামনে। নেশার কারণে একটু বেসামাল ছিলেন বলে শেষ পর্যন্ত মালিকের লাঠিয়ালের কাছ থেকে জোটে মারপিট। এভাবে আর কত মার খাবে শ্রমিক? প্রশ্নটা চোখে মুখে ফুটে ওঠে মুখুজ্যের।

এরপর মৃণাল আমাদের শোনান মা ও মেয়ের সংসারের গল্প। যেখানে মা অন্যের বাড়িতে রান্নাবান্নার কাজ করেন। প্রতিদিন কত মাছ-মাংস রান্না করেন, কিন্তু নিজের সন্তানের মুখে সেগুলো তুলে দিতে পারেন না। ঘর ভাড়া বাকি পাঁচ মাসের। পাড়াটাও ভালো নয়, বখাটেদের উৎপাত। প্রত্যহ প্রতিবেশী স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ, কারণ স্বামীটি বেকার। এই অসুস্থ পরিবেশে থাকতে চায় না মেয়ে, অথচ সহসা এই পরিবেশ থেকে যে মুক্তি মিলবে, সেই সম্ভাবনাও নেই।

এ সমস্ত টুকরো টুকরো কাহিনীর পাশাপাশি ওদিকে জমাট বাঁধতে থাকে ক্ষোভ। চাকরির আশ্বাস দিয়ে, এরপর দরখাস্ত জমা না নেওয়ার ক্ষোভ। ত্রিশ হাজার দরখাস্তকারী জোট বাঁধে। চিন্তার ভাঁজ পড়ে চেয়ারম্যানের কপালে। বোর্ডের সদস্যদের তিনি বলেন, ‘দেশটা একটা ভলক্যানোর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে, যেকোনো সময় এক্সপ্লোর করতে পারে।’ ভূমিকম্প শুরু হয়, যখন চেয়ারম্যান ও বোর্ডের সদস্যরা রাতের একটায় ফোনে হুমকি পান। থরহরি কম্প শুরু হয়ে যায় তাদের ভেতর। দূরবীন দিয়ে এই দাবিদারদের পর্যবেক্ষণ করেন চেয়ারম্যান। বলেন, এরা আমাদের চেনা। চেয়ারম্যান ভাবেন, বৈঠক করে মীমাংসা করা যাবে। এখানে যা না বললেই নয়, সেটি হলো দূরবীন ব্যবহার করে মৃণাল যে মালিক ও শ্রমিকের দূরত্ব মেপে দেখিয়ে দিয়েছেন তা দুই কথায় অসাধারণ ও ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ সৃষ্টির চমৎকার উদাহরণ। এটি সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’র চোখে লাগানো থিয়েটার গ্লাসের ‘গেইজ’ নয়, এটি হলো দুই শ্রেণির মধ্যকার দূরত্ব।

এই দূরত্ব বৈঠক করে দূর করা যাবে না, সেটা চেয়ারম্যান ভালো করেই জানেন। তাই নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বসেন তিনি। এদের চিহ্ন আবার কঙ্কাল! এর মধ্য দিয়ে মালিক ও প্রশাসনকে চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যঙ্গ করেছেন মৃণাল। এমন টানটান উত্তেজনাকর চালচ্চৈত্রিক ভাষা গোটা ভারতবর্ষেই বিরল। দেখুন, পুঁজিপতি ও বেকারদের টানাপড়েনের ভেতর মৃণাল আবার ঘটিয়ে দেন লিফলেট বৃষ্টি। সেসবের বাণী দেখে আরো আঁতকে ওঠে মালিকশ্রেণি। চেয়ারম্যান বলেন, সবই পদ্য! পদ্যের নমুনা দেওয়া যাক, যেগুলো লিফলেটে লেখা ছিল :

(ক) ত্রিশ হাজার ভাঙছে পাহাড়/ দুলছে শহর, জাগছে খামাড়, (খ) ত্রিশ হাজার করে পুকার/ জোট বাঁধো, হও তৈয়ার, (গ) গ্রাম শহর মিলাও হাত, ত্রিশ হাজার রহে সাথ, (ঘ) শিকল ভাঙো আনো জোয়ার/ ত্রিশ হাজার, ত্রিশ হাজার, ত্রিশ হাজার।

আর চুপ করে থাকা যায় না, মালিকপক্ষ মরিয়া হয়ে ওঠে। এতদিন প্রশাসন তাদের সঙ্গ দিলেও এবার জুটে যায় গণমাধ্যম। নিরপেক্ষতার ঘোমটা খুলে নগ্নভাবেই বেতারে প্রচার করা হয়, “আজ কয়েক দিন হলো কিছু হুজুগসর্বস্ব ব্যক্তি দেশে উদ্বেগ সৃষ্টিতে তৎপর হয়ে উঠেছে, এইসব কুচক্রীর দল জনগণকে বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করবার চেষ্টা করছে। দেশ যখন নানাবিধ সংকট মোচনে বদ্ধপরিকর, দেশের মানুষ যখন দারিদ্র্য দূরীকরণে কৃতসংকল্প, দেশের আপামর জনসাধারণ যখন অগ্রগতির অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তখন এই বিশাল কর্মযজ্ঞে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কিছু সমাজদ্রোহী জনগণকে উত্তেজিত করবার নাশকতামূলক প্রয়াস চালাচ্ছে। এই অন্তঃসারশূন্য ত্রিশ হাজারি হুজুগের সমূলে উৎপাটন একান্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সফল রূপায়ণ সুনিশ্চিত করতে হলে, আগামীদিনের বংশধরদের সামনে এক উজ্জ্বল স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হলে, এই সর্বনাশা হুজুগের মূল উচ্ছেদ আজ অপরিহার্য। এই দুষ্কৃতকারীদের চক্রান্ত…”

এমন প্রচার ও প্রপাগান্ডায় চায়ের কাপে ঝড় ওঠে, সাংবাদিকের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। পথেঘাটে, শহরে, গ্রামেগঞ্জে কে বা কারা শুধু ‘ত্রিশ হাজার’ লিখে সেঁটে দিচ্ছে। দরখাস্তকারীদের এই আন্দোলনে শামিল হতে থাকে শ্রমিক ও কৃষক। এদিকে প্রশাসনের লোক ধরপাকড় শুরু করে। চলে জিজ্ঞাসাবাদ। গোপন দল আছে কি? পেছনে নেতা কারা? ইত্যাদি। দেড়শ থেকে আড়াইশ, গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সমান অনুপাতে বাড়তে থাকে আন্দোলন। ‘লাঙল যার জমি তার/ সঙ্গে আছে তিরিশ হাজার’ স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে কৃষকরা। তারাও চায় প্রহসন বন্ধ হোক। মনে রাখা দরকার, ওপরের স্লোগানের দাবিটি নকশালবাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত।

ওদিকে, প্রশাসনের ওপর নাখোশ হয় চেয়ারম্যান। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না বলে। প্রশাসন প্রধানকে চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করেন, কারো পেট থেকে কথা বার করা গেল? প্রয়োজনে কথা পেটের ভেতর ঢুকিয়ে, বের করে আনতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি। এই ধারণাই কি পরে সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির সেই হীরক রাজার যন্তরমন্তর ঘর হয়ে ওঠেনি? এই প্রসঙ্গে আসছি একটু পরেই।

যা হোক, শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান বলতে বাধ্য হন, আমরা এখন বিপন্ন। দেখা যায় সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বানের জলের মতো মানুষ শুধু ছুটে আসছে। ‘কন্ট্রোল’ নামে একজনকে ডেকে সাহায্য চান চেয়ারম্যান, কিন্তু নিরুপায় হয়ে গেছে খোদ ‘কন্ট্রোল’। এই ‘কন্ট্রোল’ চেয়ারম্যানকে বলতে থাকে, আন্দোলনকারীরা স্বপ্নের মুখোমুখি, ভয়ংকর স্বপ্ন, সমাজবিরোধী স্বপ্ন। এই ‘কন্ট্রোল’ যেন বুর্জোয়াদের সরকার বাহাদুর। সর্বহারা শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্র-জনতার উত্থানে ভীত, তাই সহযোগিতা করতে অপারগ। চেয়ারম্যান তখন চিৎকার করে বলতে থাকেন, কন্ট্রোল ইঁদুরের গর্তে লুকাবেন না। অ্যাটাক করুন। কাউন্টার অ্যাটাক। এসব বলে নিজেই কাঁটাতার ঘেরা নো-ম্যানস ল্যান্ডে আত্মগোপন করেন চেয়ারম্যান। বাকিরা লাপাত্তা। গ্রামের সেই মহাজন, যিনি ধান মজুদ করে রেখেছিলেন চোরাকারবারের উদ্দেশ্যে, তার বাড়িতেও হামলা চালায় জাগ্রত জনতা। এই মহাজনটিও চেয়ারম্যানের মতো লুকিয়ে পড়ে ইঁদুরের গর্তে। তখন গর্জন শোনা যায়, হেই সামালো, ত্রিশ হাজার…। হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে তখন ছুটে আসতে দেখা যায়, রাজপথে, ফসলের মাঠ পেরিয়ে, দর্শকের দিকে তারা ছুটে আসছে, বাঁধ ভাঙা ঢেউয়ের মতো। এখানেই শেষ হয় মৃণাল সেনের ‘কোরাস’।

৩.

কলকাতা ত্রয়ীতে ক্ষুব্ধ যুবক, লড়াকু যুবক, আত্মসমালোচক যুবকের দেখা মেলে, কিন্তু এই চতুর্থ ছবিটিতে এসে চোখে পড়ে বিপ্লবী জনতার। আগের ছবিগুলোতে সাবজেক্ট একজন প্রোটাগনিস্ট হলেও, কোরাসে প্রোটাগনিস্ট জনগণ, তারাই এই ছবির সাবজেক্ট এবং তারা আপসহীন। নিজেদের পাওনা বুঝে নিতে বদ্ধপরিকর। মৃণাল যেন পরিমাণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গুণগত পরিবর্তনের পথে হাঁটলেন। তাঁর ভাবনার এই গঠন প্রত্যেকটি ছবিতেই বিদ্যমান। ‘কোরাসে’র কথা যদি বলি, তাহলে দেখব পরিচালক ব্যক্তির দুঃখ-দুর্দশাকে প্রথমে দেখান, তারপর দেখান ব্যক্তির দুর্নীতি ও স্বৈরাচার। এরপর ‘প্রাইভেট মার্কসিস্ট’ মৃণাল তাদের স্থাপন করে দেন দুটি শ্রেণিতে। মৃণাল যেন কার্ল মার্ক্সেরই প্রতিধ্বনি করেন, বলতে চান, মানব সভ্যতার ইতিহাস, শ্রেণিসংঘাতের ইতিহাস। এসবের বহুত ব্যাখ্যা হয়েছে, এবার দরকার পরিবর্তনের।

চতুর্ভুজের প্রতিটি ছবিতেই দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে মৃণাল আমাদের চৈতন্যে প্রবেশ করেন এবং প্রশ্ন করেন, এই শোষণ ও বঞ্চনা আর কত? ‘কোরাসে’ এসে এই প্রশ্নের উত্তরই দেন মৃণাল। বলেন, সব খেলা খতম। ওই দেখো জনতা জেগে উঠেছে। এবার সামাল দাও। এমন অগ্ন্যুৎপাতে শোষকশ্রেণি পালাবার পথ খুঁজে পায় না। যখন সত্যিকার অর্থে আপামর জনসাধারণ আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হয়, তখন গর্তে লুকিয়ে পড়াকেই শ্রেয় মনে করে তারা। এভাবেই রচিত হয় সর্বহারার বিপ্লব। তাই বলতে চাই, এই চতুর্থ ছবিটি দিয়ে আসলে মৃণাল সেন আগের তিনটি ছবির ভেতর রেখে যাওয়া অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে মীমাংসা করেছেন, দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে গেছেন। বলেছেন বিপ্লবই শেষ কথা। যদি শোষণ ও বঞ্চনার অবসান চাও, তাহলে জেগে ওঠো। গোটা বিশ্বের শোষিত ও বঞ্চিতরা জেগে উঠলে শোষকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিতাড়িত হবে।

এবার ছবিটির কাঠামো যদি লক্ষ করি তাহলে দেখব, এটি কিছুটা রূপক, কিছুটা ব্যঙ্গ ও কিছুটা বাস্তব ঘরানার মিশেলে তৈরি একটি ছবি। মজার বিষয়, মৃণালের ছবিটি মুক্তির ছয় বছর পর মুক্তি পাওয়া সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’র সঙ্গে এর অনেকগুলো জায়গায় মিল রয়েছে। এই মিলের জায়গাটি সত্যজিতের অনিচ্ছাকৃত বা দৈব ঘটনা বলে আমার মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে সত্যজিৎ নিজের উদারনীতি নিয়ে একটি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়। হীরক রাজা যেভাবে শেষ অঙ্কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে দড়ি ধরে টান মেরে নিজেরই স্বৈরশাসক-মূর্তিকে ফেলে খান খান করেছেন, তাতে একটি বার্তা প্রচারিত হয়, তা হলো শাসকও আসলে শোষিতের কাতারে শামিল হতে পারে। শোষক শেষ পর্যন্ত শোষিতদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেরই তৈরি করা সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু ইতিহাস এই ধারণার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। মৃণাল সেটাই যেন বলার চেষ্টা করেছেন চারটি ছবিতে। আর এজন্যই আমি বলতে চাই, উদারনৈতিকতাবাদের মুখে আগুন দেওয়ার আরেক নাম ‘কোরাস’।

শোষকদের ব্যাপারে তারাই উদার হন, যারা নিজেদের শ্রেণির বাইরে বেরোতে পারেন না, সহমর্মী হতে পারেন না সমাজের অধিকাংশ বঞ্চিত মানুষের। মৃণাল মধ্যবিত্ত, কিন্তু সেখানে থেকেও তিনি নিম্নশ্রেণির মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝার চেষ্টা করেছেন। এটা ঠিক, শুধু সমব্যথী হয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। অনুশীলনের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তবে একজন শিল্পী যদি বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তাকে অনুধাবন করে শিল্পের ভেতরে সেটাকে উপস্থাপন করেন, সেটাকে আমি কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। মৃণাল সেন সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করেছেন। যা তাঁর সমসাময়িক বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় করেননি।

যা বলছিলাম, ‘কোরাস’ ছবিটিকে নানাদিক থেকে পুনর্নির্মাণ ও জবাব দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে। এটা কীভাবে বলছি? দেখুন, ‘কোরাস’ শুরুই হয় রবি ঘোষের গান দিয়ে। এরপর গোটা ছবিতেই রবি ঘোষ ঘুরেফিরে আসেন সেই গান নিয়েই। এই একই অভিনেতা কাজ করেছেন সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে, গায়েন হিসেবে। এরপর যদি আসেন ছড়া প্রসঙ্গে, মৃণালের ছবিতে ইঙ্গিতপূর্ণ ছড়ার যেমন ছড়াছড়ি, রায়ের ছবিতেও তাই। একটি উদাহরণ দিই, ‘কোরাসে’ আছে, “কত তন্ত্র কত মন্ত্র কত ভগবান/ অভাব রচেন যিনি তিনি শক্তিমান।” বলা বাহুল্য নয়, এই ছড়ার ভগবানের প্রতিভূ হিসেবে হাজির করা হয়েছে চেয়ারম্যান, অর্থাৎ উৎপল দত্তকে। রায়ের ছবিতেও ভগবানের রূপকে হাজির হন একই অভিনেতা উৎপল দত্ত। তিনি সেখানে হীরক রাজার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই ছবিতে আমরা শুনি : “যায় যদি যাক প্রাণ/ হীরকের রাজা ভগবান।”

এরপর চেয়ারম্যানের দুর্গ আর হীরক রাজার রাজপ্রাসাদে কি খুব একটা পার্থক্য আছে? প্রশাসন ও পাইক-পেয়াদায়? কিংবা বোর্ড সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে? আমি কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই না। পার্থক্য বলতে শুধু সময়ের পার্থক্য। মৃণালের ছিল রাষ্ট্র, সত্যজিৎ পিছিয়ে গিয়ে গল্প ফেদেছেন রাজ্যে। মৃণালের করপোরেট প্রভুকে সত্যজিৎ বানালেন হীরকের রাজা। মৃণালের আধুনিক সময়কে সত্যজিৎ পিছিয়ে নিয়ে গেলেন রাজা-রানির আমলে। অথচ মৃণাল যে বলতে চাইছেন, যুগ যুগ ধরেই শোষণ চলছে, সেই রাজা-রানির আমল থেকে সামন্তযুগ পেরিয়ে এই আধুনিকযুগ পর্যন্ত, সেই বক্তব্যকেই যেন নাকচ করে স্থাপন করা হলো অন্য একটি প্লটে। সত্যজিৎ রায় উল্টো পায়ে হেঁটে দেখালেন শোষক ও শোষিত শেষ পর্যন্ত সবাই একই দলের, সকলেই স্বৈরশাসনের অবসান চায়, এমনকি খোদ স্বৈরশাসকও। এখানে বেশ সুকৌশলে স্বৈরশাসকের প্রাপ্য শাস্তিকে লুকিয়ে ফেলা হয়। সত্যজিৎ পরিবর্তনের কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটি স্বৈরাচারী শোষককে রক্ষা করে। এই ভাবনা বুর্জোয়া শ্রেণির ভাবাক্রান্ত, তিনি মনে করেন জনতার জাগরণে সকলেই উদার হয়ে যাবেন, অর্থাৎ তখন আর রাজায়-প্রজায় বিভেদ থাকবে না, প্রজারা ভুলে যাবে তাদের ওপর চালানো অত্যাচারের ইতিহাস এবং খুব সাদরে তারা নিজেদের দলভুক্ত করে নেবে সাবেক অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী রাজাকে। “রোমান্টিক উদারনীতিতেই এটা কেবল সম্ভব। শাসকগোষ্ঠী চাইলেই শ্রমিক বা কৃষক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়ে তাদেরই পক্ষে বিপ্লব করতে পারে না, বিশেষ করে আবার যারা সরাসরি রাজ্য বা রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, প্রধান ব্যক্তি! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই।” (রিবেরু ২০১৬ : ২২ এপ্রিল)

মৃণাল এই তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। তিনি মনে করতেন, শোষকশ্রেণি কখনো সর্বহারাদের কাতারে এসে মিলে যাবে না, আর সর্বহারারাও তাদের মনের আনন্দে গ্রহণ করে নেবে না। এই জায়গাতেই ‘কোরাস’ ও ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবি দুটির পথ আলাদা হয়ে গেছে। একটি গেছে বিপ্লবের দিকে, অন্যটি গেছে বুর্জোয়া উদারনীতির দিকে। আর এ কারণেই আমি বলতে চাই, মৃণাল সেন বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রে একজন স্বচ্ছ দৃষ্টির রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তিনি শ্রেণির অবস্থানকে গুলিয়ে ফেলেননি সৃষ্টিকর্মের ভেতর। সেখানে দরিদ্র ও শোষিতদের পক্ষে থাকার ভনিতা নেই। দরদ আছে। তিনি স্পষ্ট করেই বুঝতে পেরেছিলেন দারিদ্র্য ও শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় একটাই, সেটি হলো বিপ্লব। ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে সত্যজিতের ‘বিপ্লব’ গোলমেলে ও ইতিহাস-বিরুদ্ধ।

৪.

মৃণাল সেন ‘কোরাস’ ছবির ধারণা পেয়েছিলেন ১৯৭৪ সালেই। আগের বছরই মুক্তি পেয়েছে ‘পদাতিক’। ছবি তৈরির নতুন প্লট খুঁজছিলেন মৃণাল। তো, চুয়াত্তর সালে ব্যাংকের একটি কাজে বাইরে বেরিয়েছেন তিনি। পথে যেতে যেতে দেখলেন বিশাল লাইন দিয়ে অনেক নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে আছেন। মৃণাল কাজের কথা ভুলে সেই সাপের মতো লাইনটিতে ঢুকে যান। ‘সাপে’র পেটে ঢুকে তিনি বুঝতে চাইলেন রোদ্রে অপেক্ষারত মানুষগুলোর যাতনার কথা। সকলেই ফরম কিনেছেন, এখন আবার জমা দেবেন। দীর্ঘ লাইন। পুলিশও বেশ তৎপর। এই ঘটনার বীজ নিয়েই মৃণাল সোজা চলে যান বন্ধু মোহিত চট্টপাধ্যায়ের কাছে। মৃণাল আর মোহিত মিলেই তৈরি করলেন ‘কোরাসে’র চিত্রনাট্য। তৈরি হলো ছবিটি। কিন্তু কলকাতা ত্রয়ী নিয়ে যতটা আলাপ-আলোচনা দেখি, ‘কোরাস’ নিয়ে ততটা দেখি না। অথচ এই ছবিটি না হলে, আমার মনে হয়, ওই তিনটি ছবি পূর্ণতা পেত না। তাই আমি বলতে চাই, ‘কোরাস’ মৃণাল সেনের শুধু নয়, বাংলা চলচ্চিত্রের দুনিয়াতেই এক গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ। এর চিত্রনাট্যে আছে অভিনবত্ব, রূপক আর বাস্তবতার চমৎকার মিশেল। সম্পাদনার মধ্যে রয়েছে আধুনিকতা, ব্রেখটীয় রীতি ও অপ্রচলিত বয়ানরীতির অপূর্ব মেলবন্ধন। ‘কোরাস’ রাজনৈতিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কোরাস সৃষ্টি করুক এবং ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বের অন্য প্রান্তে, এটাই চাই।

পুঁজি

১. মৃণাল সেন, (২০১৫), আমি ও আমার সিনেমা, কলকাতা : বাণীশিল্প।

২. মৃণাল সেন, (২০০৬), অলওয়েজ বিয়িং বোর্ন, নয়াদিল্লি : স্টেলার পাবলিশার্স।

৩. বিধান রিবেরু (২০১৬, ২২ এপ্রিল), সত্যজিতের হীরক রাজা : ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উদারনীতি, ঢাকা : দৈনিক সমকাল পত্রিকা, লিংক : https://bit.ly/2R1Oe6C, (২০ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে সংগৃহীত)।

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. বিয়ে নয়, এবার ‘লিভ ইন’ করতে চান সামান্থা!
  2. হিরানি-আমির জুটি এবার বায়োপিকে
  3. আমিরের নতুন সিনেমা মুক্তির ৮ সপ্তাহ পর দেখা যাবে ইউটিউবে
  4. সমালোচনার তীরে বিদ্ধ, তবু ভিউতে চূড়ায় ‘জুয়েল থিফ’
  5. সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেন ভয় পায় তারকারা?
  6. মঞ্চে উঠেই অজ্ঞান, হাসপাতালে ভর্তি বিশাল
সর্বাধিক পঠিত

বিয়ে নয়, এবার ‘লিভ ইন’ করতে চান সামান্থা!

হিরানি-আমির জুটি এবার বায়োপিকে

আমিরের নতুন সিনেমা মুক্তির ৮ সপ্তাহ পর দেখা যাবে ইউটিউবে

সমালোচনার তীরে বিদ্ধ, তবু ভিউতে চূড়ায় ‘জুয়েল থিফ’

সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেন ভয় পায় তারকারা?

ভিডিও
ফাউল জামাই : পর্ব ৯১
ফাউল জামাই : পর্ব ৯১
এই সময় : পর্ব ৩৮১৬
এই সময় : পর্ব ৩৮১৬
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৮
মহিলাঙ্গন : পর্ব ৩৫৮
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৫
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৫
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫১৯
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫১৯
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৮
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ২৯৮
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৭
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৮৬৭
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৫
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৫

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x