অরুণ কুমার বিশ্বাসের লেখালিখির পঁচিশ বছরে আলোচনা-আড্ডা

বিশিষ্ট গোয়েন্দালেখক অরুণ কুমার বিশ্বাসের লেখালিখির পঁচিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন অডিটোরিয়ামে শনিবার (১৭ মে) এক জমজমাট আলোচনা-আড্ডা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট কবি ও লেখক মারুফুল ইসলাম, মাশুক আল হোসাইন, মনি হায়দার, নিশাত সুলতানা, রানা মাসুদ ও লেখকের স্ত্রী ডা. তপতী মণ্ডল। আলোচনাপর্ব শেষে সংগীত পরিবেশন করেন পাতা এন্ড পাপা।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন অরুণ কুমার বিশ্বাস। মূলত গোয়েন্দালেখক, সেইসঙ্গে রম্য, কিশোর উপন্যাস, থ্রিলার, রোমাঞ্চগল্প, ভুতুড়ে কাহিনী, সবক্ষেত্রেই তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। বিশেষ করে গোয়েন্দা গুবলু কিংবা অলোকেশ রয়ের স্রষ্টা হিসেবে তিনি বাংলাদেশের গোয়েন্দাকাহিনীর একটি ভিন্ন লেখনশৈলী যেমন তৈরী করেছেন; তেমনি তার একটি নিজস্ব পাঠককূল সৃষ্টি হয়েছে। একবিংশী শতাব্দীর অনেকটা বইবিমুখ নতুন প্রজন্মকে তিনি তাঁর লেখনি দিয়ে আপন আলোয় কাছে টানতে পেরেছেন, এটা বইপ্রেমিদের জন্য একটি আশা জাগানিয়া খবর।
মনি হায়দার তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে একটি মৌলিক গোয়েন্দা চরিত্রের অনুপস্থিতি ছিল, অরুণ যা পরিপূর্ণ করছেন।
নিশাত সুলতানা বলেন, অরুণ কুমার বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অগ্রজ। তাঁর রচনাশৈলীর আমি বিশেষ অনুরাগী।
কবি ও আলোকচিত্রী রানা মাসুদ বলেন, লেখক যেমন লেখেন, তেমনি বয়ান করেন। তার লেখার স্টাইল অসাধারণ, বয়ে চলা স্রোতধারার মতোই সাবলীল।
মাশুক আল হোসাইন বলেন, লেখক যেমনি আমার অনুজ তেমনি একই বিভাগে চাকরির সুবাধে আগে থেকেই চেনাজানা। তাঁর লেখা আমার কাছে বিশেষ উপাদেয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সায়েমা শাহীন সুলতানা বলেন, আমার ছেলে-মেয়েদের প্রিয় লেখক অরুণ কুমার বিশ্বাস। এতে বোঝা যায় তিনি বর্তমান প্রজন্মের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য একজন লেখক।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট কবি মারুফুল ইসলাম অরুণ কুমারকে বহুলপ্রজ লেখক উল্লেখ করে বলেন, ডিটেকটিভ গল্প লেখার সমস্ত কলাকৌশল তাঁর জানা। গোয়েন্দা অলোকেশ রয় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
অরুণ কুমার বিশ্বাস পেশায় সরকারি কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মহাপরিচালক (গবেষণা ও পরিসংখ্যান)। পেশায় সরকারি কর্মকর্তা হলেও নেশা তাঁর লেখালেখি। বিশেষ করে গোয়েন্দা লেখক হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে একটি নিজস্ব ভাষাশৈলী ও পাঠকমহল তৈরি করেছেন। তাঁর লেখালেখির শুরু কলেজে পড়াকালীন।
অরুণ কুমার বিশ্বাস বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে কলামের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য লিখছেন ছড়া, গল্প, অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, ভুতুড়ে ও গোয়েন্দা কাহিনী। পেশাগত কাজের ফাঁকে তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে রম্য ধাঁচে নিয়মিত কলাম লিখছেন। রম্যরচনা ও কিশোর অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ে তার লেখাজোখা প্রচুর। তবে তিনি গোয়েন্দাগল্পের বিশেষ ভক্ত। ‘ফেলুদা’র মতো একটি চৌকস বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দা চরিত্র ‘অলোকেশ রয়’তাঁর সৃজিত প্রাইভেট ডিটেকটিভ, যাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘জলপিপি’, ‘কফিমেকার’, ‘আলিম বেগের খুলি’, ‘অনল মিত্রের অপমৃত্যু’, ‘সাইকোপ্যাথ’, ‘গুপ্তি’বিশেষ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। আরও আছে ‘গোয়েন্দা গুবলু’।

তাঁর প্রচেষ্টায় ডিটেকটিভ ক্লাব নামে একটি গোয়েন্দাগল্প লিখিয়ে প্লাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে। এসেছে আমাদের গোয়েন্দা শিরোনামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা। লেখকের এ পর্যন্ত লেখা গ্রন্থের সংখ্যা দেড়শ ছুঁই ছুঁই। স্ত্রী ডা. তপতী মণ্ডল। দুই ছেলে অনিকেত ও অগ্নিশ। তারাও লেখালেখি করেন। পুরো লেখক পরিবার। তিনি নটরডেম কলেজ থেকে মেধার স্বীকৃতিসূচক ‘অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স’, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ‘সার্টিফিকেট অফ ডিসটিঙশন’ও ‘স্পাই’উপন্যাসের জন্য চ্যানেল আই প্রবর্তিত ‘এসিআই-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮’লাভ করেন। এ বছর পেয়েছেন ‘জিগীষা সাহিত্য সম্মাননা’।