দোতলা বাড়ির ছাদে টিনের ছাউনির ঘর। ঘরের চারপাশ কাঠ ও তারের নেট দিয়ে ঘেরা। খামারের ভেতর কবুতরের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি। পাখির কিচিরমিচিরে বাড়িটি সবসময় মুখরিত থাকে।

বাসার কাছে আসতেই শোনা গেল পাখির কলরব। ছাঁদে গিয়ে আটকে গেল চোখ। সুন্দর পরিচ্ছন্নভাবে সাজানো পাখির খাঁচা। পাখিগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি ওড়াওড়ি করছে। কোন পাখি বানাচ্ছে বাসা। মনোরম সব দৃশ্য দেখতে পাখিপ্রেমীরা আসছেন এই পাখির খামারে। কেউ কেউ আবার পাখি কিনছেনও।

খামারটি তামিমের। তামিম এখানে পরিচিত ‘পাখি তামিম’ নামে। সে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরশহরের বাসিন্দা মো. মোকসেদ আলীর ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সে। ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন তিনি।

তামিম জানান, পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০১৪ সালে অনার্সে পড়ার সময় ঢাকার কাঁটাবনের একটি পাখির খামার থেকে প্রথমে দুটি বাজরিগার পাখি নিয়ে এসে বাসার ছাদে একটি খাঁচায় রাখেন। পরে সেই পাখি বাচ্চা দিলে সেটিকে বড় পরিসরে করার চিন্তা করেন তামিম।

২০১৮ সালে বগুড়া থেকে ১৮ জোড়া পাখি বাসায় কিনে নিয়ে এসে ছাদে তৈরি করেন একটি পাখির সেট। পরবর্তীতে পাখিগুলো ডিম দেয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা।

তবে এই যাত্রাটা খুব সহজ ছিল না তামিমের জন্য। শুরুতেই তিনি পরিবারের বাধার মুখে পড়েছিলেন। যদিও সব বাধা ডিঙিয়ে তিনি আজ সফল। শুধু নিজের সফলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে উপজেলার আগ্রহী অনেক তরুণকেও পথ দেখাচ্ছেন তিনি।

পাখির এই খামারটি করতে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো। তার এই খামারে প্রতি মাসে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। তামিম তার এই পাখির খামার থেকে চার বছরে প্রায় লাখ-খানেক টাকার পাখি বিক্রি করেছেন। আর তার পাখিসম্পদ তো থেকেই গেল।

নানা প্রজাতির অসংখ্য লাভবার্ড, কাকাতুয়া, ফন্স, ফেনসি, রেসার, বাজরিগার, ককাটিয়েল, গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ, টেইল ফিঞ্চ, সিরাজী কবুতর, অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু, দেশি-বিদেশি কবুতরসহ অনেক জাতের পাখি রয়েছে।

তামিম জানান, পাখিদের প্রতিদিন খাবার হিসেবে কাউন, ভাত, খিচুড়ি, কুসুম দানা,কাঁচা বুট ও সবজি দেওয়া হয়। বর্তমানে তার খামারে অনেক প্রজাতির কবুতর ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬০ জোড়ার মতো পাখি আছে।

তামিম বলেন, ‘ছোট থেকেই পাখির প্রতি খুব মায়া তার। খাঁচার পোষা পাখি লাভবার্ডের সঙ্গে তার যাত্রা শুরু চার বছর আগে। প্রথমে শখ থাকলেও এখন তা আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে কবুতর ও পাখি পালনের চিন্তা আসে। পাখির খামারের পাশাপাশি নিজস্ব পুকুরেও তিনি মাছ চাষ করেন।’

তামিম আরও বলেন, 'অনেক পরিশ্রম করে খামারটি গড়েছি। প্রথমে পরিবারের কেউ চাইত না যে কবুতর পালন করি। কিন্তু, এখন কেউ আর বাধা দেয় না।'

তরুণ এই উদ্যোক্তার মতে, ‘পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। অনেকে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটছেন, তাদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে ভালো কোনো কাজে লেগে থাকা।'

রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি কবুতর ও পাখি পালন করে তামিম স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার মতো করে তরুণরা যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি এভাবে গবাদি পশুপাখি পালন শুরু করে তাহলে দেশে বেকারত্ব কমবে।’