কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে সহজেই

তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগলে খুব দ্রুতই তা আয়ত্তে চলে আসবে। মানুষের জীবন যাবে না। ক্ষতি হবে না কোনো পণ্যের।
পাশ্চাত্যের কোনো প্রযুক্তি নয়, খোদ বাংলাদেশের তরুণরা উদ্ভাবন করেছেন অগ্নিনিরোধক প্রযুক্তি। পটুয়াখালীর বেলাল হোসেন মিন্টুর নেতৃত্বাধীন পাঁচ চার যুবকের একটি দল পরীক্ষামূলকভাবে দেখিয়েছে কীভাবে তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি শর্টসার্কিটসহ বিভিন্ন কারণে লাগা আগুন থেকে রক্ষা করবে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানকে।
পটুয়াখালীর মুন্সেফপাড়া এলাকায় ‘আদুরী অ্যান্ড বাবলা গার্মেন্টস’। বেলাল হোসেন মিন্টুর সঙ্গে আছেন বায়জীদ বোস্তামি, গোবিন্দ ঘোষাল, কাজী জাকির হোসেন ও শান্তি দাস মদন। এসেছেন নিজেদের উদ্ভাবিত ‘অটো ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম’ নিয়ে।
ওই কারখানার প্রবেশ মুখে ঝুট কাপড়ে বিদ্যুতের শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লেগে যায়। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প বিদ্যুৎ বাতি জ্বলে ওঠে এবং পাম্পের মাধ্যমে সক্রিয় হয় ‘ওয়াটার গান।’ আর এর মাধ্যমে পানির সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হয় আগুন।
উদ্ভাবক মিন্টু জানান, ওই গার্মেন্টসে ১০টি সেলাই মেশিনে ১০টি সুইচ স্থাপন করা হয়। যেকোনো একটি মেশিনের সুইচে চাপ দিলে সেকেন্ডের মধ্যে ১০টি মেশিনে সংযুক্ত থাকা টিউবলাইট বন্ধ হয়ে যায়। জ্বলে ওঠে জরুরি সংকেত সংক্রান্ত বাতি। একই সময়ে পানি দেওয়ার ‘ওয়াটার গান’ সক্রিয় হয়। ওই পানিতেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে আগুন।
বেলাল হোসেন মিন্টু জানান, এ প্রযুক্তি আরো আধুনিক ও উন্নত করে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে অহরহ আগুনের ধ্বংস থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এর খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম বলে জানিয়েছেন মিন্টু।
বেলাল হোসেন মিন্টুর বাড়ি পটুয়াখালী শহরের কাঠপট্টি এলাকায়। শৈশব থেকেই বৈদ্যুতিক কাজে মিন্টুর ব্যাপক ঝোঁক। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তাঁর। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মিন্টু গণমাধ্যমের কর্মীদের উপস্থিতিতে দেখান নিজের আর তাঁর দলের উদ্ভাবন।
মিন্টু তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘পোশাক কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে প্রত্যেক শ্রমিকের টেবিলে এ রকম সুইচ সংযুক্ত থাকবে। যে কোনো ফ্লোরে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো টেবিলের একটি সুইচ বন্ধ করলেই আমাদের প্রযুক্তি যন্ত্রটি সেই ফ্লোরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেবে। বিকল্প ডিসি ভোল্টের বাতি জ্বলে উঠবে এবং তাৎক্ষণিক পানির পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাম্পের পানির নলগুলো দিয়ে পানি সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।’
মিন্টু আরো জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই নিজস্ব পদ্ধতিতে গভীর নলকূপের পানিতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। পানি ফুরিয়ে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই এই পদ্ধতিতে। এ ছাড়া যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ভবনের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও শ্রমিকরা ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে সব সংকেত পেয়ে যাবে। এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষয়ক্ষতি একেবারেই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।
মিন্টু বলেন, ‘দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় মাধ্যম পোশাক কারখানা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের মৃত্যু, সম্পদহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ কারণে জিএসপি সুবিধা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে।’ তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে জিএসপি সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে এবং দেশ আবার জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে বলে মনে করেন তিনি।
স্বল্প পরিসরে এবং পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি প্রদর্শন করলেও মিন্টু তাঁর এই প্রযুক্তি আরো উন্নত পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি পোশাক কারখানাসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে চান। আর এ জন্য তিনি সরকারসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মিন্টু ও তাঁর সঙ্গীদের এই প্রযুক্তির প্রদর্শনী দেখে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আদুরী অ্যান্ড বাবলা গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নার্গিস আক্তার।
পটুয়াখালীর সংগঠক মানস কান্তি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে মিন্টুর এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ও বিজিএমইএর সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন।
পটুয়াখালী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘মিন্টুর এ ক্ষুদ্র মেধার আবিষ্কারকে বড় মাপের জায়গায় নিতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’