৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আরডিপির ৪ কর্মকর্তা আটক

অধিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাতক্ষীরার ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আরডিপি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামের একটি বেসরকারি বিনিয়োগ ও ঋণদান সংস্থার বিরুদ্ধে।
মুনাফার মাসিক কিস্তি ও মূল টাকা ফেরত নিতে আজ বুধবার দুপুরে গ্রাহকরা সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে আরডিপি কার্যালয় ঘেরাও করেন। পরে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ সাতক্ষীরা আরডিপি কার্যালয়ের চারজনকে আটক করে এসব কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন আবদুল হান্নান, সফিকুল ইসলাম, মো. রোকনুজ্জামান ও নাসিমা খাতুন। সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হেকমত আলী তাঁদের আটক করেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অর্থ প্রতারণার অভিযোগে আরডিপির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হচ্ছে। এ মামলার তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।’
এর আগে আরডিপি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জুলকার নাইনসহ ১৪ জন পালিয়ে যান। এদিকে আশাশুনি, পারুলিয়া, পাটকেলঘাটা, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও কলারোয়া আরডিপি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পালিয়ে গেছেন। ওই কার্যালয়গুলোতে তালা ঝুলছে। গ্রাহকরা টাকা ফেরত পেতে তাঁদের খুঁজে হয়রান হচ্ছেন। গ্রাহকরা সাতক্ষীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলায় আরডিপি কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যারা আরডিপির হয়ে গ্রাহক তৈরি ও টাকা নিয়েছেন তাঁদের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত মুনাফার টাকা পাচ্ছেন না। মূল টাকাও এখন ফেরত পাচ্ছেন না। আরডিপির একাধিক গ্রাহক জানিয়েছেন, তাঁদের স্বল্প আয় থেকে নিয়মিতভাবে সঞ্চয় করে তা আরডিপিতে বিনিয়োগ করে এখন পথে নেমেছেন।
গ্রাহকেরা জানান ২০১১ সাল থেকে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরডিপি তাদের অফিস খোলে। গ্রাহকেরা আরডিপিতে দৈনিক ও মাসিক কিস্তিতে টাকা সঞ্চয় করেছেন।
সুলতানপুরের মাসুদুর রহমান জানান, তিনি এক লাখ টাকা জমা রেখেও মুনাফা পাচ্ছেন না। একইভাবে বকচরা, মুন্সীপাড়া, কালিগঞ্জ, নলকুড়া, বরেয়া, বটিয়াঘাটা, কেড়াগাছি, কাজীরহাট, কুকরালির একাধিক গ্রাহক এক লাখ টাকা থেকে ২১ লাখ টাকা পর্যন্ত আরডিপিতে বিনিয়োগ করে মুনাফা ও মূল কোনো টাকাই পাচ্ছেন না।
কামালনগর গ্রামের বৃদ্ধ ভিখারী রাবেয়া খাতুন জানান, তাঁর দুই প্রতিবন্ধী মেয়ে কমলা ও মর্জিনার নামে দুটি বইতে তিনি ভিক্ষা করে জোগাড় করা ৩০ হাজার টাকা আরডিপিতে রেখেছিলেন। সে টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। টাকা ফেরত পেতে এখন নানা স্থানে দেন-দরবার করছেন।
আটক সাতক্ষীরা আরডিপির কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানান, আরডিপি স্বাবলম্বী, প্রতিশ্রুতি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে। এসব প্রকল্পের আওতায় কেবল সাতক্ষীরা কার্যালয়ে সদস্য সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। জেলার আটটি কার্যালয়ের অনুকূলে সাড়ে চার হাজার সদস্য রয়েছেন। এসব সদস্যদের বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
রোকনুজ্জামান আরো জানান, সাতক্ষীরা শহরে আরডিপির নামে ১৪ কাঠা জমি রয়েছে যার দাম চার কোটি টাকা। তিনি জানান, ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাকি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার ৩২ পুরানা পল্টনের প্রধান কার্যালয় থেকে দেশের ৭১টি শাখা কার্যালয় সরাসরি পরিচালিত হয় বলে তিনি জানান।
রোকনুজ্জামান জানান, আরডিপির প্রতিষ্ঠাতা এম. ইবরাহীম খলিল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক উজ্জ্বল। এ দুজন সরাসরি শাখা কার্যালয়ের টাকা নিয়ে থাকেন। ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ।
এ ব্যাপারে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মাসুদা পারভীন বলেন, ‘আরডিপি সাতক্ষীরায় নিবন্ধিত সংস্থা নয়। তা সত্ত্বেও ওই প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে তা জানতে আমি বার বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো জবাব মিলেনি। এ ব্যাপারে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়ে জনগণকে সেখানে টাকা বিনিয়োগ না করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।