রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিত্যক্ত বাড়িতে এক কলেজছাত্রকে আটকে রেখে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তিনজন দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ নগরীর উপশহরের পরিত্যক্ত ওই বাড়ি থেকে কলেজছাত্রকে উদ্ধার করেছে। এ সময় তিনজনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।

আটক তিনজন হলেন জাহিদুল ইসলাম (২০), তাহাসান হোসেন আকাশ (২১) ও শাহাদাত হোসেন (২৭)। শাহাদাতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায়। অন্য দুজনের গ্রামের বাড়ি নাটোর সদরে। তারা রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জিম নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

আটক শাহাদাত হোসেন মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো টাকা-পয়সা দাবি করিনি। আমি শুধু ওকে (জিমকে) বলেছি, তোমার বন্ধু ছাত্রলীগ করে তাকে এনে দাও। তারপর তুমি চলে যাও।

অন্ধকারে পরিত্যক্ত বাসায় আটকে রেখে কেন, এমন প্রশ্নে শাহাদাত হোসেন বলেন, যখন আসি তখন অন্ধকার ছিল না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন জিম বলেন, আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার পদত্যাগ পর্যন্ত আমি আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। কিছুদিন ধরে আমাকে বারবার কল করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, আমি নাকি ছাত্রলীগ করি। আমি নগর ভবনের সামনে ছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে। আনার পরে মারধর করে। বলে, আমার সঙ্গে নাকি ছাত্রলীগের যোগাযোগ আছে। তারা আমার কাছে চাঁদাও দাবি করেছিল। পরে আমি আমার দুজন বন্ধুকে ডাকলাম। আমার বন্ধুরা এসে লোকজন ডেকে আমাকে উদ্ধার করেছে।

জিমকে উদ্ধারে গিয়েছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান কাফি। তাঁর বাড়ি উপশহরেই। কাফি বলেন, ‘আমরা খবর পাই যে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাড়ির গ্যারেজে এক ছাত্রকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।

কাফি আরও বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি, ওই ছাত্রকে গ্যারেজে অন্ধকারের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। আমি ওই তিনজনের পরিচয় জানতে চাই। তখন তারা নিজেদের সমন্বয়ক পরিচয় দেয়। বলে, ওপরের নির্দেশ আছে এই ছেলেকে ধরার জন্য। তার বন্ধু ছাত্রলীগ করে। একে ধরলে তার বন্ধুকে পাওয়া যাবে। আমি তাদের কাছে ওপরের নির্দেশটি দেখতে চাই। কিন্তু তারা কোনো নির্দেশনা দেখাতে পারেননি। এরই মধ্যে পুলিশ চলে আসে। পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে।

কাফি আরও বলেন, ‘এরা যে ছেলেটিকে ধরে আনে, সে ছাত্রলীগ না। মোবাইলে ছবি দেখলাম সে নিজেই আন্দোলনে ছিল। ছেলেটির কাছে প্রথমে দেড় লাখ এবং পরে এক লাখ টাকা দাবি করেছিল তারা।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ওই তিনজন নিজেদের তাহাস নূর নামে একজনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাহাস ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।

তাহাস নূর রাজশাহী কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি। ওই তিনজন আন্দোলনের সময় আমার সঙ্গে ছিল। আমরা একসঙ্গে নগর ভবন পাহারা দিয়েছি। তারা আমাকে জানায় যে, তারা একজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীকে ধরেছে। আমি তাকে পুলিশে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। পরে কী হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।

নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, শুনলাম যে সমন্বয়ক পরিচয়ে এক কলেজছাত্রকে সাবেক মেয়রের পরিত্যক্ত বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করেছে। তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে। ভুক্তভোগী ছেলেটি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আমরা মামলা গ্রহণ করব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের একজন রাজশাহীর জি কে এম মেশকাত চৌধুরী মিশু বলেন, তাহাসের সঙ্গে আমার ৫ আগস্টের পর পরিচয়। সে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নগর ভবন পাহারা দিত। তার ছেলেরা কাউকে জিম্মি করেছিল, এমন কোনো খবর আমি পাইনি।